আগামী ১৫ ডিসেম্বর কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাংকের নির্বাচন রয়েছে। সেই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য রণকৌশল গ্রহণ করল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাংকের নির্বাচন দেখভাল করার। তাঁর নির্দেশ মেনেই দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জী এবং তৃণমূলের অন্যতম নেতা তথা সমবায় ব্যাংক পরিচালন করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আশিস চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেন, পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে দলীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার। সেই নির্দেশ মেনেই মঙ্গলবার কোলাঘাটে পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাংকের পরিচালন কমিটির রাশ নিজের হাতে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে। বিজেপিকে রুখতে সমস্ত জাতীয়তাবাদী মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে চলার কথা বলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো সর্বসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য একটি প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হয়।
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আশিস চক্রবর্তী বলেন, এই ব্যাংকের ভোটার রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। কাঁথিতে এই ব্যাংকের মূল শাখা থাকলেও কলকাতার বড় বাজারেও ভোটার রয়েছে। সবার কাছে আবেদন রাখা হচ্ছে, জাতীয়তাবাদী প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান সমবায় ব্যাংকের মাধ্যমে রাজ্যের আর্থ ও সামাজিক অবস্থার মানোন্নয়ন। সমবায় আন্দোলন জোরদার করে তৃণমূল স্তরে উন্ননয়নই রাজ্য সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। সেকারণে সমমনোভাবাপন্ন প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
Advertisement
কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাংকের নির্বাচনে মোট আসন সংখ্যা ১০৮টি। যেখানে তৃণমূল, বিজেপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কয়েকশো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার রয়েছেন ৮০ হাজার ৪৮০ জন। মোট ১৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে দুটি আসনেই হারতে হয়েছে তৃণমূলকে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাংক। এই ব্যাংকের পরিচালন ক্ষমতা অধিকারীদের নিয়ন্ত্রণে যাতে না থাকে, তাঁর জন্য মরিয়া তৃণমূল। সেকারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণত কোনো সমবায় নির্বাচন নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ব্যাংকের পরিচালন কমিটির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে বিশেষ কৌশল গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এই নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের সাতজন বিধায়কের সঙ্গে সোমবার বিধানসভায় বিশেষ বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে এই কো-অপারেটিভ ব্যাংকের নির্বাচনের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এর আগে কোনও সমবায় সমিতির নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবহার দেখা যায়নি। ইতিমধ্যেই স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে সুর চড়িয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংবাদ মাধ্যমে তিনি মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, এ রাজ্যে সুষ্ঠ ভোট হওয়া সম্ভব নয়। সেকারণেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আধা সামরিক বাহিনীর ঘেরাটোপে নির্বাচন করার। এদিনের বৈঠকে অখিল গিরি ছাড়াও মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তমলুকের বিধায়ক ড. সৌমেন মহাপাত্র, জ্যোতির্ময় কর সহ অন্যান্য নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, ভোটদানে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকে। দূরের ভোটারদের নিয়ে যাওয়া ও আসার জন্য পরিবহন দপ্তরকে ব্যবস্থা করতে হবে।
Advertisement



