ভোটের মরসুমে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ইংরেজদের খুশি করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘জনগণমন’ গান লিখেছিলেন বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন কর্ণাটকের বিজেপি সাংসদ বিশ্বেশ্বর কাগেরি। এর আগেও কবি গুরু রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ‘বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত’ বলে দাগিয়ে দেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। শুধু তাই নয়, এই গান গাওয়ার জন্য অসমে একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এবার রবীন্দ্রনাথ রচিত দেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন ফের এক বিজেপি সাংসদ।
এরই প্রতিবাদে এদিন ফুঁসে উঠল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি পরিকল্পনামাফিক ভুল তথ্য প্রচার করছে ও কবিগুরুকে অপমান করছে বলে সরব তৃণমূল কংগ্রেস। এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ব্রাত্য বসু ও শশী পাঁজা। তাঁরা বলেন, ‘বিজেপি কোনওদিনই রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা করতে জানে না। এবারও পরিকল্পনামাফিক ইতিহাস বিকৃত করে কবিগুরুকে অপমান করছে।‘
ব্রাত্য বসু বলেন, ‘এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। জনগণমন লেখার সঙ্গে পঞ্চম জর্জের আগমনের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি মিথ্যাকে ইতিহাস হিসেবে তুলে ধরছে। এভাবে কবিগুরুকে ছোট করা চলবে না।‘ তিনি আরও বলেন, ‘পুজোর সময় মুখ্যমন্ত্রীর লেখা গান প্রকাশিত হয়, আর সেই সময় যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্বোধনে আসেন, তাহলে কি বলা হবে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানাতে গান লিখেছেন? এ তো হাস্যকর যুক্তি!’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। এটা তাদের পুরনো কৌশল। বাঙালি এই অপমান কোনওভাবেই মেনে নেবে না।‘
প্রসঙ্গত, বিশ্বেশ্বর কাগেরির দাবি, ‘জনগণমন’ মূলত ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জকে স্বাগত জানাতে লেখা হয়েছিল। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘বন্দে মাতরম’ হওয়া উচিত বলে মত কাগেরির। কর্ণাটকের শাসকদল কংগ্রেসও বিজেপির এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘জনগণমন’ পঞ্চম জর্জকে স্বাগত জানাতে লেখা হয়েছিল, এর আগেও বহুবার এই অভিযোগ উঠেছে। ইতিহাসবিদরা বারবার জানিয়েছেন, কবিগুরু নিজেই স্পষ্ট করে লিখেছিলেন, তাঁর এই গান মানুষের ‘জননায়ক’-কে উদ্দেশ্য করে লেখা, কোনও রাজাকে নয়।
বিজেপি ইতিহাস বিকৃত করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে, দাবি তৃণমূলের। অন্যদিকে, এই বিতর্ক ফের রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে রাজনৈতিক কাদা-ছোঁড়াছুঁড়ি বাড়িয়ে দিল।