কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন চলছে। সাধারণত উপনির্বাচনে শাসকদলের পাল্লাই ভারি থাকে। তাই কালীগঞ্জের ক্ষেত্রে হার জিত নিয়ে চিন্তা নেই বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। জয়ের ব্যবধান নিয়েই চিন্তায় নেতৃত্ব। তবে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চাইছে না তৃণমূল। অন্যদিকে হিন্দুদের একত্রিত করার লক্ষ্যে ময়দানে নেমেছে বিজেপি। এই নির্বাচনে সব থেকে দুর্বল কংগ্রেস। বামেদের সমর্থনে এই নির্বাচনে লড়াই করছে তারা। তৃণমূল বা বিজেপির বাইরে কোনও বিকল্প নেই, এই তত্ত্ব খারিজ করতে নির্বাচনী ময়দানে নামছে কংগ্রেস ও বাম।
২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের জমি মাপতে কালীগঞ্জের ভোটকেই বেছে নিয়েছে শাসক-বিরোধী সব পক্ষ৷ তৃণমূলের সবথেকে বড় অস্ত্র উন্নয়ন৷ অন্যদিকে অপারেশন সিঁদুরের পর জাতীয়তাবাদী আবেগের উপর ভরসা রাখছে বিজেপি৷ পাশাপাশি তাঁদের হিন্দুদের একত্রিত করার লক্ষ্য তো রয়েছেই। কংগ্রেস আস্থা রেখেছে অতীত পরিসংখ্যানের উপর। কালীগঞ্জে গত ৭৪ বছরের মধ্যে ৪৪ বছর আসনটি কংগ্রেসের দখলে ছিল। বাম আমলেও এই আসনটি ধরে রেখেছিল কংগ্রেস। ২০ বছর আসনি ছিল আরএসপির দখলে। ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে প্রথমবার কালীগঞ্জে জেতে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৬ সালে আবার একা লড়াই করে বামেদের কাছে হেরে যায়। ২০২১ সালে কারও সঙ্গে জোট না করেই জিতেছিল তৃণমূল। এই আসনে কখনই বিজেপি জয় পায়নি। তবে আজকের উপনির্বাচনের তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ কিন্তু বিজেপিই। অনেকটাই পিছিয়ে বাম সমর্থিত কংগ্রেস।
সবার আগে কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল। কালীগঞ্জের প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের কন্যা আলিফা আহমেদকে প্রার্থী করা হয়েছে। শিক্ষিত, কর্পোরেট আদবকায়দা জানা আলিফাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁকে জনসাধারণ সামনে প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে কোনও সমস্যাই হচ্ছে না রাজ্যের শাসকদলের। অন্যদিকে প্রয়াত বিধায়কের মেয়ে হওয়ায় আলাদা আবেগ কাজ করছে। তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মাস্টারস্ট্রোক খেলেছে তৃণমূল। তবে সেখানেই থেমে যায়নি নেতৃত্ব। রাজ্যের প্রথম সারির মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের দফায় দফায় পাঠানো হয়েছে কালীগঞ্জে। বিপুল ব্যবধানে জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল।
কালীগঞ্জ নির্বাচনের দায়িত্ব রানাঘাটের সাংসদ তথা দলের অন্যতম রাজ্য সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকারকে দিয়েছে বিজেপি। হিন্দুদের একত্রিত করাই তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। তাঁর দাবি, এ বার ৯০ শতাংশ হিন্দু ভোট বিজেপি পাবে। তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক ভাগাভাগি হলে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আশিস ঘোষ।
কালীগঞ্জে ভোটারের সংখ্যা আড়াই লক্ষের আশেপাশে। তার মধ্যে ৫৪ শতাংশ ভোটার মুসলমান সম্প্রদায়ের৷ এর মধ্যে কিছু অংশ কংগ্রেসকে ভোট দিলে বিজেপি নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবে। তবে তৃণমূলের দাবি, জাতি ধর্ম নির্বিশেষ সকলেই আলিফাকে সমর্থন করবে। অন্যদিকে কালীগঞ্জে দুর্বল সংগঠন নিয়ে ভাবাচ্ছে কংগ্রেসকে। এ বিষয়ে প্রাক্তন সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী বলছেন, ‘দীর্ঘ দিন আমাদের রাজনৈতিক গতিবিধি তেমন ছিল না। এখন ভোটের সময়ে আবার সকলে নেমেছে। কিন্তু সংগঠন তো দুর্বল হয়েছে। তাই জিতে যাব, কখনওই সে কথা বলছি না।’
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, কালীগঞ্জে কংগ্রেস ভোট পাবে না। কারণ বাংলার মানুষ বুঝে গিয়েছে, কংগ্রেস বা সিপিএমকে ভোট দেওয়ার অর্থ ঘুরিয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়া। তাই দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা কংগ্রেসকে ভোট দিতেন তাঁরাও এখন তৃণমূলকে সমর্থন করবে। তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের দাবি, তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ৫০ হাজারের উপরে থাকবে। তাই বলা বাহুল্য, জয় পরাজয় নিয়ে মাথা ব্যথা নেই তৃণমূলের। ব্যবধান বাড়াতেই লড়াই চালাচ্ছে নেতৃত্ব।