গাছ কাটা হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ আসেনি, চলছে বিক্ষোভ-অবরোধ

আম্ফানে রাস্তায় উপড়ে পড়েছে গাছ। (File Photo: AFP)

আম্ফানে বিধ্বস্ত জেলাগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুতের সাবস্টেশনের মধ্যে ৮০ শতাংশই সারিয়ে তুলে কর্মক্ষম করা সম্ভব হয়েছে, এমনটাই জানাল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম। ক্ষতিগ্রস্ত সাবস্টেশনগুলি নিজস্ব ছন্দে ফেরায় উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক জায়গাতেই রবিবার বিকালের মধ্যে ফিরে এসেছে বিদ্যুৎ।

কলকাতায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সিইএসসি এবং কলকাতা পুরসভার মধ্যে চাপানউতোর চলছে। ঠিক সেই সময় ২৭৩ টি সাবস্টেশনের মধ্যে ২৪০ টি সচল করে তোলা হল। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর টুইট করে এই তথ্য জানিয়েছে।

সেই সঙ্গে আরও জানানো হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি এবং এগরা, তমলুক, নদিয়ার কৃষসগর, রানাঘাট, গয়েশপুর, কল্যাণী এবং উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত এবং নিউটাউনের অধিকাংশ এলাকাতে রবিবার দুপুরের মধ্যে বিদ্যুৎ চালু করে দেওয়া হয়েছে। বিকেলে জানানো হয়, সোনারপুর, বারুইপুর, কাকদ্বীপ এবং নামখানাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করা হয়েছে।


নিগম সুত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটা বড় অংশে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। সেইসব এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। কলকাতা শহর লাগোয়া দুই ২৪ প্রগনার বড় অংশে শুক্রবার থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার চেষ্ট করা হয়েছে। তবে প্রধান বাধা হয়েছে গাছ কাটার সমস্যা। অধিকাংশ জায়গায় ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করে নিগম গাছ কাটার চেষ্টা করেছে।

এদিকে, চারদিন পরেও বিদ্যুৎ না পেয়ে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষজন ক্ষুব্ধ। মানুষজন বলছেন, যে ১৫ টি এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না। তাহলে বিভ্রান্তিটা ঠিক কোথায় হচ্ছে। কিভাবে সিইএসসি স্বাভাবিক হওয়ার কথা জানাল স্বরাষ্ট্র দফতরকে। কেনই বা স্বরাষ্ট্র দফতর পুরো খতিয়ে না দেখে টুইট করল। এই নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে আসছে সাধারণ মানুষের মনে।

রবিবার দুপুর ১ টায় স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে ট্যুইট করে জানানো হয়, যাপুর, সেলিমপুর সহ দক্ষিণ কলকাতার ১৫ টি এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। অথচ বাস্তবে দেখা গেল, বাঘাযতীন সহ একাধিক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে বাঘাযতীনে।

সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় ভুক্তভোগী মানুষজন। বাঘাযতীন হাসপাতালের প্রবেশদ্বারেও পড়ে রয়েছে গাছ। সেই গাছ সরানোর জন্য দেখা যায়নি কাউকে। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঘাযতীন বাজারে রাস্তার ওপর বিভিন্ন জিনিসপত্র ফেলে অবরোধ করা হলেও দেখা যায়নি জনপ্রতিনিধিদের। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের।

এমনিতেই লকডাউন চলছে। তার ওপর রবিবার। সেকারণে রাস্তায় যানবাহন কম। ফলে বড়সড় যানজট না হলেও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছে। এই অবরোধে শামিল হতে দেখা গিয়েছে শাসকদলের নিচুতলার কর্মীদেরকেও।

রাজনৈতিক ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে রেখে তারা এই অবরোধে শামিল হন। তাদের একটাই বক্তব্য, চারদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে সমস্যা বাড়বে। দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকেও ঘেরাও করে রাখা হয়। পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।

দক্ষিণ কলকাতার পাঁচ থেকে ছয়টি জায়গায় এদিন দফায় দফায় অবরোধ করা হয়। অবরোধ অনেকক্ষণ চললেও পুলিশের দেখা মেলেনি। কারণ জনরোষের মুখে পড়তে হবে এই ভয়ে অবরোধমুখী হননি কেউ। যদিও আসেপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু তার কার্যত নিষ্ক্রিয়ই থেকেছে।

রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষজন অবরোধে বাধা পড়লেও পুলিশ তাদের ঠিকমতো নির্দেশ দেয়নি, এমনও অভিযোগ রয়েছে। আসলে পুলিশও নিশ্চুপ। কারণ তাদের অনেকে জল ও বিদ্যুৎ সমস্যার মুখোমুখি। ফলে প্রকাশ্যে না বললেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলছেন, এই বিক্ষোভ স্বাভাবিক।

অবরোধকারীদের আশ্বস্ত করার মতো জনপ্রতিনিধির দেখা মেলেনি। কারণ এর আগে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এলাকার মানুষজনকে বলেছিল, আপনারা সবাই মিলে হাতে হাত লাগিয়ে গাছ কাটার ব্যবস্থা করুন, আমি বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব। কিন্তু গাছ কাটা হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ আসেনি। স্বাভাবিকভাবে জনপ্রতিনিধিদের ওপর ভরসা ক্রমশ চলে যাচ্ছে।

এদিকে, সিইএসসি’র ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক বলেন, আমরা খুব কম কর্মী নিয়ে কাজ করছি। তাই স্বাভাবিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি।