বিজেপির এদিনের অত্যাচার নজিরবিহীন, ভোট দিয়ে বললেন মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

সপ্তম এবং শেষ দফার নির্বাচন মিটল। রবিবার বিকেল থেকে আকাশে প্রখর দাবদাহের আঁচ কিছুটা হলেও কমল। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর ক্ষোভের আগুনতাত কমল না তৃণমূল নেত্রীর। বরং রবিবার বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আঁতাত নিয়ে সুর চড়ালেন তৃণমূল সুপ্রিমাে। বললেন বিজেপি এদিন যেভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে বাংলার ওপর অত্যাচার চালিয়েছে, তা আগে কখনও দেখিনি।

রবিবার দুপুর থেকেই মমতার ভােটদান কেন্দ্র, মিত্র ইনস্টিটিউশন (শাখা) ঘিরে মানুষের উৎসাহ ছিল নজরে পড়ার মতাে। বেলা দেড়টা নাগাদ এখানেই ভােট দিতে আসেন দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রকুমার বসু। তিনি বলেন, দক্ষিণ কলকাতা থেকেই প্রতিবছর পরিবর্তনের হওয়া ওঠে। তাই এবারও এই কেন্দ্রে নিজের জয় নিয়ে আশাবাদী তিনি।

হরিশ চ্যাটার্জি রােড সংলগ্ন মিত্র ইনস্টিটিউশন, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রতিবছর ভােট দিতে আসেন, এদিনও মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে পথের দু’ধারে ছিল উৎসাহী জনতার ভিড়। সাতসকালেই এই বুথে ভােট দিয়ে ডায়মন্ডহারবারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেল তিনটের পর থেকেই আকাশের রােদের তেজ অনেকটা মরে এল। বাতাসে জ্বালা ধরানাে ভাবটাও কমল। কাছাকাছি কোথাও বৃষ্টি হওয়ায় বাতাসে ঠাণ্ডা আমেজ। তবে রবিবারের প্রকৃতি উত্তাপ কমালেও রাজনীতির তাপ বিন্দুমাত্র কমেনি এদিন।


বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ট্রাফিক সিগন্যালের নিয়ন্ত্রণে মালুম হল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় তাঁর ভােটাধিকার প্রয়ােগ করতে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় এসে পৌছলে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই মিত্র ইনস্টিটিউশনে ২০৯ নম্বর বুথে ভােট দিতে চলে যান তিনি। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ভােট দিয়ে বেরিয়ে আসার পর তাঁকে নিয়ে ক্যামেরার ঝলকানি, জনতার কোলাহল।

এর মধ্যেই তৃণমূল নেত্রী বলেন, ভােট দিতে এসেছি, কোনও প্রচার অভিযানে আসিনি। তবে, এত বছর ধরে ভােট দেখছি। এরকম ভােট কখনও দেখিনি। এদিন বিজেপি কর্মীরা যেভাবে বাংলার ওপর অত্যাচার করেছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। তবে ভােটের ফলাফল নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা বলে জয়সূচক ‘ভিক্ট্রি চিহ্ন’ দেখিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

সপ্তদশ লােকসভা নির্বাচন জুড়েই মমতার নিশানায় বিরােধী পক্ষ হিসেবে ছিল গেরুয়া বাহিনী। সেইসঙ্গে এই রাজনৈতিক দলই যে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করছে, তা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন মমতা। নির্বাচনের অন্তিম দিনে সেই প্রতিবাদ আরও তীব্র হল।

তবে রাজ্যজুড়ে ভােটের দিন বিজেপির অশান্তি বাঁধানাে এবং নির্বাচন কমিশনের অতি সক্রিয়তার অভিযােগ মানতে চাননি মুখ্যমন্ত্রীর একই বুথের ভােটার চন্দ্র কুমার বসু। বরং তাঁর অভিযােগ, তৃণমুল দলের গুণ্ডারাই তাণ্ডব চালিয়েছে। খুন করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও বেশি করে সক্রিয় থাকা উচিত ছিল বলেই মনে করছেন চন্দ্রবাবু।

তবে এবারের লােকসভা নির্বাচনের অন্তিম দিনে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোেগ করা হয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা অত্যাচার চালিয়েছে। সর্বভারতীয় তৃণমূলের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন এই তথ্য জানিয়েছেন। বিজেপির নির্দেশ পেয়েই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা নির্মমভাবে তৃণমূল কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে এই ট্যুইটে।

তৃণমূল নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবেই করতে চেয়েছে। কিন্তু ভাটপাড়ার উপনির্বাচনে অর্জুন সিং-এর গুণ্ডাবাহিনী যেভাবে তৃণমূলের প্রার্থী মদন মিত্রের ওপর হামলা চালিয়েছে, গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়াবহ। বিজেপির নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অত্যাচারকে ‘হরর স্টোরি’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে এই ট্যুইটে।