সাহেব’-কে হারিয়ে শোকস্তব্ধ টলিপাড়া, রাজনীতি টানলেন দিলীপ

একদিকে যেমন তাপস পালের মৃত্যুতে ব্যাকুল ভাবে কাঁদল টলিপাড়া, আবার অন্যদিকে ঘােরতর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও শােনা গেল নেতাদের একাংশের গলায়।

Written by SNS Kolkata | February 19, 2020 2:26 pm

তাপস পাল (File Photo: IANS)

সিনেপ্রেমিদের কাছে তিনি ‘সাহেব’, বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সুপারস্টার। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তাপস পালের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে কাটাছেঁড়া হল বিস্তর। একদিকে যেমন তাপস পালের মৃত্যুতে ব্যাকুল ভাবে কাঁদল টলিপাড়া, আবার অন্যদিকে ঘােরতর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও শােনা গেল নেতাদের একাংশের গলায়।

মঙ্গলবার ভাের রাতে মৃত্যু হয় তাপস পালের মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। অভিনেতার মৃত্যুতে রাজনৈতিক এবং অভিনয় জগতে শােকের ছায়া। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরও রাজনৈতিক মন্তব্য করতে পিছপা হলেন না বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ। তাপস পালের মৃত্যুর জন্য তৃণমূলকে দুষে তিনি বলেন, ‘অসময়ে চলে গেলেন তাপস পাল। যে লোকেদের সঙ্গে তিনি ছিলেন, তাদের জন্যই তাঁর এই অবস্থা।’ এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কার্যত তৃণমূলের দিকেই নিশানা করেছেন তিনি তা স্পষ্ট।

এখানেই শেষ নয়, দিলীপ ঘােষ আরও বলেন, তাপস পালের রাজনৈতিক কেরিয়ার দেখে সাধারণ মানুষের শিক্ষা নেওয়া উচিত কারা এখানে রাজনীতি করছেন এবং কারা ভাল মানুষকে খারাপ করছেন।

শুধু দিলীপ ঘােষ নন, বিজেপির আরেক নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন তাপস পালের মৃত্যু প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, খুবই দুঃখজনক। তাপস পাল অভিনেতা হিসাবে খুবই ভাল ছিলেন। কিন্তু শেষ জীবনে টাকার প্রতি একটা লােভ ছিল। আর সেটাই গ্রাস করল। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যত নিন্দার ঝড় ওঠে।

এদিকে তাপস পালের মৃত্যু প্রসঙ্গে শােক প্রকাশ করে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, ‘তাপস পাল অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। ওনার মৃত্যুতে আমি শােকস্তব্ধ। ওঁর আত্মা শান্তি পাক, এই কামনা করি।’

এদিকে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি এদিন বলেন, ‘তাপসদার সঙ্গে যখন কথা বলতাম শেষের দিকে ওনাকে হতাশাগ্রস্ত লাগত। তিনি অবহেলার শিকার হয়েছিলেন। উনি বলতেন, কেউ তাে আমায় পাত্তা দেয় না আর। আমার কোনও দাম নেই।’ অধীরবাবু আরও বলেন, ওনাকে বলেছিলাম রাজনীতি ভাল না লাগলে অভিনয় জগতে ফিরে যেতে।

এদিকে তাপস পালের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে টলিউডের নবীন-প্রবীণ দুই প্রজন্মই। বিষণ্ণ গলায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘একে একে সবাই চলে যাচ্ছে।’

শােকস্তব্ধ তাপস পালের এককালীন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি জানান, আমাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও অনেক বড় মাপের শিল্পী ছিলেন তাপস পাল। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের আরেক নক্ষত্র পতন হল। আমি আমার এক কাছের বন্ধুকে হারালাম।

প্রকাশ্যে বা সামাজিক মাধ্যমে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি শতাব্দী রায়। তবে সূত্রের খবর, এই খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এদিকে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র শােক জানানাের পাশাপাশি অভিনেতাদের রাজনীতিতে আসা উচিত কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তােলেন। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের বােধহয় রাজনীতিতে আসা উচিত নয়। সকাল থেকে একটাই কথা মাথায় ঘুরছে। তাপস পালের মতাে এত প্রতিভাবান শিল্পীর শেষটা কি এই রকম হওয়া উচিত ছিল?’

এদিন তাপস পালের মৃত্যুর পর টুইট করে শােক ব্যক্ত করেন মাধুরী দীক্ষিত। তিনি লেখেন, এই সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই একটা শুন্যতা অনুভব করছি।

শােকের ছায়া টলিপাড়ার প্রবীণদের মধ্যেও। শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় জানান, দুটি ছবিতে তিনি তাপস পালের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। একটিতে তাপস পাল তার বাবার ভূমিকায় ও অন্যটিতে দাদার ভুমিকায় অভিনয় করেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না বলে জানান শ্রাবন্তী।

অঙ্কুশ জানান, একটি ছবিতে তাপস পালের সঙ্গে অভিনয়ের সুযােগ হয়েছিল তার। আপন খেয়ালে থাকলেও তাপস পাল সেটে মজা করতেন বলেও জানান এই অভিনেতা। এদিন তাপস পালের মৃত্যুতে গভীর শােক প্রকাশ করেন দেব, সােহম সহ অন্যান্য টলি অভিনেতারাও। অন্যদিকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত শােকপ্রকাশ করে বলেন, তাপস পালের মতাে অভিনয় টলিউডের অনেকেই করতে পারেন না।