আজ দেশের নজর মমতার সমাবেশে

তিনি কি বলছেন তার দিকে নজর রাখবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী আর যাঁরা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন, অর্থাৎ রাহুল গান্ধি কিংবা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তাঁরাও মনোযোগ দিয়ে শুনবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় একুশে জুলাই এর সমাবেশ থেকে ঠিক কি বলছেন।

আজকের ভারতীয় রাজনীতিতে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব। বলা চলে গত ৩০ বছরে তিনি এই রাজনৈতিক ক্যাপিটাল বা পুঁজি অর্জন করেছেন।


কলকাতায় ভিক্টোরিয়া হাউস এর সামনে থেকে তৃণমুলের রাজনৈতিক সমাবেশের তাই সর্বভারতীয় গুরুত্ব রয়েছে।

এবং আগামী দিনে ভারতবর্ষের বিজেপি বিরোধী রাজনীতি কি চেহারা নেবে, তার একটা ইঙ্গিত হয়তো একুশে জুলাইয়ের এবারের সমাবেশ দিয়ে যাবে।

যদি বাম কিংবা কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রাজনৈতিক গুরুত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের মনে রাখতে হবে দেশের শাসক দল বিজেপি।

কিন্তু সাম্প্রতিককালে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করেছে এই নীলপাড়ের সাদা শাড়ি আর হাওয়াই চটি পরা বাঙালি মহিলার প্রতিটি পদক্ষেপকে গভীরভাবে জরিপ করেই।

সেই কারণেই তিন বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমুল সরকারের সঙ্গে সংঘাতের সম্পর্ক জিইয়ে রাখার পুরস্কার হিসেবে কলকাতার রাজভবন থেকে দিল্লির উপরাষ্ট্রপতির বাসভবনে পৌঁছাচ্ছেন জগদীপ ধনকর।

আসলে পশ্চিমবঙ্গের ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনই বুঝিয়ে দিয়ে ছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আর মমতা বন্দোপাধ্যায় সম্পর্কটা ঠিক কিভাবে আবর্তিত হচ্ছে!

একটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। কার্যত সর্বভারতীয় নির্বাচনে পরিণত হতে পারে, এবং বিজেপির সর্বশ্রেষ্ঠ ভোটক্যাচার নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে দলের অধুনা ‘চাণক্য’ বলে পরিচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতে পারেন, তা তো আমরা দেখেছি।

সেই সবকিছুই হয়তো বলে দিয়েছিল তালীনশ্যাম সমুদ্র মেঘলা বঙ্গভূমির গুরুত্ব কতটা আর সেই ভূমির থেকে উঠে আসা নেত্রীকে হারানো গেরুয়া শিবিরের কাছে কতটা জরুরি!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে আছেন কি না অথবা তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চান কিনা, এইসব প্রশ্ন গৌন।

এই ২১ জুলাইতে নিশ্চিতভাবে মমতা বন্দোপাধ্যায় সুভাষ চন্দ্র বসুর পর প্রথম কোনও বাঙালি রাজনীতিক যিনি সর্বভারতীয় রাজনীতিকে এইভাবে প্রভাবিত করছেন বা আলোড়িত করছেন।

দয়া করে কেউ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা করবেন না, কীর্ণাহারের প্রয়াত নেতা শুধুমাত্রই একজন ‘ব্যাকরুম বয়’।

জনমোহিনী শক্তিতে অথবা রাজনীতির মোড় বদলে দেওয়ার মতো কোনও সিদ্ধান্ত তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নেননি।

কিন্তু ২০২১ পরবর্তী মমতা বন্দোপাধ্যায় সর্বভারতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারেন, তাঁর দলের প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বসম্মত বিরোধী প্রার্থী হিসেবে বিজেপির বিরুদ্ধে আদর্শের লড়াইতে নামিয়ে দিতে পারেন।

তিনি বললে গোটা ভারতবর্ষের সংখ্যালঘুরা মন দিয়ে শোনেন, সেই সংখ্যালঘু মুসলিম, খৃস্টান কিংবা শিখও হতে পারেন।

ভারতবর্ষে বিজেপি ‘হিন্দি, হিন্দু এবং হিন্দুস্তান’এর যে স্লোগান তুলে বাজিমাত করতে চায় তার বিরুদ্ধে তৃণমুল নেত্রী বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং বহুস্তরীয় সমাজ ব্যবস্থার সার্থক প্রতিনিধি।

তিনি বাঙালি, প্রবল ভাবে বাঙালি, যে বাঙালি ইসকনের রথের দড়িতেও টান দেন, আবার ঈদের নামাজের পর প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময়ে অকৃপণ থাকেন।