ভক্তদের কাঁধে নাচলেন বামা, জনসমুদ্র শান্তিপুরে

শান্তিপুর মানেই ঐতিহ্য ও ইতিহাস। কালীপুজো নিয়েও ইতিহাসের কমতি নেই। তবে ভক্তদের কাঁধে বামা কালীর নাচ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ভাসানের দিন শান্তিপুরে দেখা গেল ভক্তদের জনসমুদ্র। বামা কালী, এখন নামটাই যথেষ্ট। বামা কালীর শোভাযাত্রা দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে শান্তিপুরে ভিড় জমিয়েছিলেন লাখো লাখো ভক্ত। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় শান্তিপুরের কালীর নিরঞ্জন। শোভাযাত্রা দেখার মত। সন্ধ্যা থেকে রাত, ক্লান্তি নেই ভক্তদের। বামা আসার আগেই নিশ্চুপ হয়ে যান তাঁরা। দূরে এক চিলতে মশাল দেখেই ‘মা মা’বলে চিৎকার করে ওঠেন অগুনতি ভক্তরা।
নিরঞ্জনের পথে এগিয়ে আসছেন বামা। বামা কালীর সামনে কোনো আলোর ঝলকানি নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুধু মশালের আলোয় মাঝেমধ্যে ফুটে উঠছে বামা কালীর রূপ। অপরূপ, চোখ ফেরানো যায় না। বামার শোভাযাত্রা দেখতে পেয়েই চিৎকার করে ওঠেন ভক্তরা। কেউ হাত তুলে, কেউ হাত জড়ো করে। কান পাতা দায় হয়ে ওঠে ভক্তদের চিৎকারে। বামা চলেছে। বাঁশের কাঠামোয়। ভক্তদের কাঁধে। না, তখনও শুরু হয়নি বামার নৃত্য। শোভাযাত্রা দেখার জন্য তখনও অপেক্ষায় জনসমুদ্র। রাস্তার দু’ধারে, বাড়ির ছাদে, দোকান ও বাড়ির কার্নিশে শুধু কালো মাথা। বাচ্চা থেকে বয়স্ক, বাদ নেই কেউই। কেউ নদিয়া জেলার, কেউ আবার উত্তর ২৪ পরগনার, বহরমপুরের, কেউবা এসেছেন হুগলি থেকে। বামার নৃত্য দেখতে বহু ভক্ত ছুটে এসেছেন কলকাতা থেকেও।
বামা কালীর শোভাযাত্রা শেষ হতেই, শুরু হয় মায়ের গয়না খোলা। অপেক্ষা, কয়েক মিনিটের। এরপর বাঁশের কাঠামো কাঁধে তুলে নেন ভক্তরা। বামা কালীকে কাঁধে করে নিয়ে আসা হয় অপেক্ষারত লাখো লাখো ভক্তদের মাঝে। সেই সন্ধিক্ষণ, যা দেখার জন্য সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করছেন মায়ের ভক্তরা। ভক্তরা শুরু করলেন বামা কালীকে নিয়ে নাচ। নেচে উঠলেন লাখো লাখো ভক্তরা। চিৎকারে ফেটে পড়ল গোটা এলাকা। বামার নাচ ক্যামেরাবন্দি করলেন হাজারো ভক্ত। সত্যি, সেই দৃশ্য যে দেখবেন, তিনিও বলবেন বামা কালী নাচছে।
কয়েক সেকেন্ড ধরে চলল বামা কালীর নৃত্য। তারপর নিস্তব্ধ গোটা এলাকা। বামা চলল নিরঞ্জনের পথে। নাচ শেষ হতেই বাড়ির পথে পা বাড়ান ভক্তরা। তবে, চোখে পড়েছে অনেক গাফিলতি। একটি চৌমাথা। রাস্তার দু’দিক দিয়ে আসছিল শোভাযাত্রা। বাকি দু’দিক চলে গিয়েছে গঙ্গার দিকে। একেই সংকীর্ণ রাস্তা। লাখ লাখ মানুষের সমাগম। জনসমুদ্র। নিরাপত্তার কোনো বলয় নেই। চোখে পড়েনি পুলিশের সঠিক নজরদারি। নেই কোনো ব্যারিকেড। মহিলা,শিশুদের নিরাপত্তা এক্কেবারে ছিল না বললেই চলে। প্রশাসনের চরম গাফিলতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যায়।  তবে, এটা বলতেই হয়, শুধুমাত্র বামা কালীর নাচ দেখতেই ভিড় জমান ভক্তরা। এই দেবী যেন ভক্তদের হৃদয়কে ব্যাকুল করে তোলেন। এই নাচ শুধু ভক্তির প্রকাশ নয়, বরং দেবীর সঙ্গে একাত্মতার অনুভূতি তৈরি করে।