রাজ্যের তিন বিধায়ক ও ৫০ কাউন্সিলর যােগ দিলেন বিজেপিতে

রাজ্যের তিন বিধায়ক ও ৫০ কাউন্সিলর যােগ দিলেন বিজেপিতে (Image: Twitter/@BJP4India)

৩৫ ওয়ার্ড বিশিষ্ট ভাটপাড়া পুরসভার দখল নিতে চলেছে বিজেপি। প্রাক্তন পুরপ্রধান অর্জুন সিং ঘাসফুল ছেড়ে বিজেপিতে যােগ দেওয়ার পরই টালমাটাল শুরু এই পুরসভায়। বর্তমানে পুরসভার একজিকিউটিভ অফিসার সমস্ত দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে জগদ্দলের মজদুর ভবনে আট জন কাউন্সিলর বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের হাত ধরে বিজেপিতে যােগ দেওয়ার তৃণমূলের দখলে থাকা এই পুরসভায় পদ্মফুল ফোটা এখন সময়ের অপেক্ষা। প্রসঙ্গত, ভাটপাড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান অর্জুন সিং বিজেপিতে যােগ দেওয়ার সময় সঙ্গেই ছিলেন ১১ জন কাউন্সিলর। এদিন আরও আটজন বিজেপিতে যােগ দেওয়ার সংখ্যা দাঁড়াল ২০।

এদিনের পালা বদল প্রসঙ্গে অর্জুন বলেন, ঘরের ছেলেরা ঘরেই ফিরে এল। এদিন আটজন ফিরে এসেছেন। বাকি কাউন্সিলাররা খুব শীঘ্রই বিজেপিতে যােগ দেবেন। তিনি আরও জানান জেলাশাসককে চিঠি দেওয়া হবে। তারপর আস্থা ভােট। সেই ভােটাভুটির মাধ্যমে পুরবাের্ড বিজেপির দখলে আসবে।


অর্জুন বলেন, লােকসভা নির্বাচনের আগে থেকে এতদিন পর্যন্ত ভাটপাড়ার উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেভাবেই ভাটপাড়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

উল্লেখ্য এদিন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যােগ দিলেন কাউন্সিলর প্রবীর বৈদ্য, মােহন দাস, মদন মােহন দাস, মনােজ গুহ, বিভা বিশ্বাস, সীমা মন্ডল, খুসবুন নিসা ও মিলি দত্ত।

মদন মােহন বলেন, মানুষের রায়কে তাে মাথা পেতে নিতেই হবে। তাই অর্জুন সিংয়ের হাত ধরে বিজেপিতে যােগ দিলাম। মােদির উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞের শামিল হবার জন্য। কাউন্সিলর প্রবীর বৈদ্য বলেন অর্জুনদার হাত ধরেই রাজনীতিতে এসেছিলাম। কিছুদিনের জন্য দাদাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। খুব কষ্ঠ হচ্ছিল। তবে ফের দাদার কাছেই ফিরে এলাম মােদিজির নেতৃত্বে উন্নয়নে শামিল হতে।

দলবদলকারী কাউন্সিলরদের দাবি তারা আগেই বিজেপিতে যােগদান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের চাপে করতে পারেননি। তাই লােকসভা নির্বাচনের ফল বেরােনাের পর বিজেপিতে যােগদান করলেন। এদিনের এই দলবদলের ফলে ৩৫ আসনের ভাটপাড়া পুরসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল বিজেপি। বর্তমানে ৩৪ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। তার মধ্যে একজন সিপিএমের।

কয়েক সপ্তাহ আগেই ভাটপাড়ায় অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে তৃণমূল। তাতে ২২ টি ভােট পায় শাসকদল। ফলে সরতে হয় অর্জুনকে। অর্জুনের দাবি দলবদলকারী কাউন্সিলররা তাঁর নিজে হাতে তৈরি। ফলে বেশিদিন তাঁরা যে তাঁকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন। তৃণমূল বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে।

অর্জুন জানান, নৈহাটি, হালিশহর , বীজপুর , কঁচরাপাড়া , টিটাগড় ও বারাকপুর পুরসভা কয়েকদিনের মধ্যেই দখল করবে বিজেপি। বদলে যাবে পঞ্চায়েতগুলির চেহারাও। এদিন ভাটপাড়া দখলের পর অর্জুনের হুঙ্কার, তৃণমূলকে শেষ করে দেব।

তাঁর এই হুঙ্কার যে কেবল কথার কথা নয় তার আভাস পাওয় যায় দিল্লিতেই। এদিন দিল্লিতে ২৪ টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট কাচড়াপাড়া পুরসভার ১৭ জন কাউন্সিলর, ২৩ টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট হালিশহর পুরসভার ১৭ জন, ৩১ টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট নৈহাটি পুরসভার ২৯ জন কাউন্সিলর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যােগ দেন। ফলে খুব শীঘ্রই হাতবদল হতে চলেছে নৈহাটি, হালিশহর ও কাচড়াপাড়া পুরসভার। এই তিনটি পুরসভার সিংহভাগ কাউন্সিলর এদিন ঘাসফুল ছেড়ে বিজেপিতে যােগ দেন।

অর্জুন বলেন, ভাটপাড়া, নৈহাটি, হালিশহর ও কাচড়াপাড়া পুরসভা তৃণমূলের হাতছাড়া হচ্ছেই। পাশাপাশি গাড়ুলিয়া, উত্তর বারাকপুর, টিটাগড় ও বারাকপুর পুরসভাও গেরুয়া শিবিরের দখলে আসতে চলেছে। তিনি আরও জানান, জগদ্দল বিধানসভার কাউগাছি এক ও দুই, পানপুর, কেউটিয়া, মামুদপুর, নৈহাটি বিধানসভার অন্তর্গত কঁপা চাকলা, মাঝিপাড়া পলাশী, শিবদাসপুর ও জেঠিয়া এবং নােয়াপাড়া বিধানসভর মােহনপুর ও শিউলি পঞ্চায়েত বাের্ডও বিজেপির দখলে আসতে চলেছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

প্রসঙ্কত রাজ্যে ভােট প্রচারে এসে নরেন্দ্র মােদি দাবি করেছিলেন ৪০ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যােগাযােগ রাখছেন। ফল ঘােষণার পর থেকেই সেই জল্পনা জোরদার হচ্ছিল। ভােটের পর দলবদলের তালিকায় প্রথম নাম লেখালেন তৃণমূলের সাসপেন্ডেড বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় ও বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষার ভট্টাচার্য। এছাড়া বিজেপিতে গেলেন হেমতাবাদের বাম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য ২০১৬ সালে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন। পরে তৃণমূলে শামিল হন।

এই দলবদল প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হুঙ্কার, ২০২১ সালে দেখিয়ে দেব। ভুলে যাবেন না ২০০৪ সালে লােকসভায় আমাদের মাত্র একজন সাংসদ ছিল। এরপরেই তাঁর চাঞ্চল্যকর দাবি, বিজেপিতে যাঁরা যােগ দিয়েছেন তাঁরা কি মন থেকে গিয়েছেন? মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বিজেপিতে যােগদান করানাে হচ্ছে।