এসআইআর সংক্রান্ত শুনানিতে হেনস্থার জেরে বৃদ্ধ পিতা আত্মহত্যা করেছেন। এই অভিযোগ তুলে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন মৃত বৃদ্ধের পুত্র। সোমবার পুরুলিয়ার পাড়া থানা এলাকায় এই অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, সোমবার সকালে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ৮২ বছরের বৃদ্ধ দুর্জন মাঝি এসআইআর শুনানিতে হাজিরা দিতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু দুপুরের পর তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। পরে বাড়ির কাছেই একটি রেললাইন থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবি, চরম মানসিক চাপে পড়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
দুর্জনের পুত্র কানাই মাঝির অভিযোগ, তাঁর পিতার নাম দীর্ঘদিন ধরেই ভোটার তালিকায় ছিল। ২০০২ সালের ভোটার তালিকাতেও দুর্জনের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অনলাইন তালিকায় যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে তাঁর নাম বাদ পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে বিএলও-র কাছে প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র-সহ এনুমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছিলেন দুর্জন মাঝি। কানাইয়ের আরও দাবি, সমস্ত নথি জমা দেওয়া সত্ত্বেও কমিশনের তরফে পাঠানো নোটিসে জানানো হয়, কোনও নথি জমা পড়েনি। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, বারবার দপ্তরের অসহযোগিতা এবং শুনানিতে হেনস্থার আশঙ্কাতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বৃদ্ধ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫ ডিসেম্বর দুর্জনকে শুনানির নোটিস পাঠানো হয়। এরপর সোমবার শুনানির দিন টোটো ভাড়া করে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ছিল দুর্জনের। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও যানবাহন না পেয়ে তিনি আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কখন এবং কীভাবে শুনানিতে পৌঁছবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তা করছিলেন তিনি। শুনানিতে ডাক পড়ার এই দুশ্চিন্তাই তাঁকে চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে বলে পরিবারের অভিযোগ।
এই ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ আধিকারিকদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আধিকারিকদেরও দায়ী করা হয়েছে মৃত বৃদ্ধের পুত্রের করা অভিযোগে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৮ এবং ৬১(২) ধারায় অভিযোগ দায়ের করে সেটিকে এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন কানাই মাঝি। একই সঙ্গে পিতার মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন তিনি।
ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং সমস্ত দিক বিবেচনা করেই তদন্ত এগোবে। পুরুলিয়ায় বৃদ্ধের আত্মহত্যা ও জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে এফআইআরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এসআইআরের কারণে অনেক মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। আপনারা কী বৃদ্ধ মানুষকে সম্মান দিতে জানেন না? এমনকি সোমবারেও এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেন। তাঁর অপরাধটা কোথায়?’
ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি কিরীটি আচার্য্য বলেন, ‘এসআইআর করার নামে মানুষকে হয়রানি করার নিদর্শন আমরা দেখছি। বিভিন্ন জায়গায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। পুরুলিয়া জেলায় একজন আদিবাসি নিবাসী একজনকে আত্মহত্যা করতে হল।’ ঘটনার নিন্দা করেছেন তিনি। বৃদ্ধের আত্মহত্যার খবর পেতেই সোমবার তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন কিরীটি। এরপরই মঙ্গলবার শুনানিতে হেনস্থার অভিযোগে জ্ঞানেশ কুমার ও মনোজ আগারওয়ালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।