উপাচার্যকে দেখতে হাসপাতালে রাজ্যপাল, পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধানকড় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সাথে দেখা করেছেন, বর্তমানে তিনি কলকাতার বেসরকারিভাবে পরিচালিত এএমআরআই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। (Photo: IANS)

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কাণ্ড নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে। আর এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত হয়। রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের সংঘাত চরমে ওঠে। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে হেনস্থার ঘটনায় বিশৃঙ্খলার মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং সহউপাচার্য প্রদীপ ঘােষ। দুজনকেই দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শনিবার সকালে অসুস্থ দুজনকে হাসপাতালে গিয়ে দেখে এলেন রাজ্যপাল। অসুস্থ উপাচার্যকে দেখে তিনি বলেন, আপনি আমাকে ফোন করলেন না কেন? বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হেনস্থার ঘটনার পরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এবং পুলিশের ব্যর্থতা নিয়েও তাঁকে সরব হতে দেখা গিয়েছিল।

এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাৰ্কি পরিবেশ দ্রুততার সঙ্গে ফিরে আসুক চাইছেন রাজ্যপাল। কি করে তা ফেরানাে সম্ভব সেব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অশিক্ষক এবং পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি এদিন হাসপাতালে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে প্রায় পঁচিশ মিনিট কথাবার্তা হয় রাজ্যপালের। হাসপাতাল থেকে একটি নােটপ্যাড চেয়ে নিয়ে বেশ কিছু বিষয় লিপিবদ্ধ করেন তিনি।


বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাৰ্কি পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে দুজনের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে। সবাইকে নিয়ে একজোট হয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যপাল। উপাচার্যের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেন তিনি। খোঁজ নেন উপাচার্যের কোনও আঘাত লেগেছে কিনা?

রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদালয়ের আচার্য। বৃহস্পতিবারের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি একজন অভিভাক হিসাবে সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে। আচার্য জানান, সকলে মিলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। আমি উপচার্যের সঙ্গে এবিষয়ে কথাবার্তা বলেছি। আশা করছি তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন এবং পুনরায় কাজে যােগ দেবেন।

অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও শনিবার হাসপাতালে গিয়ে উপাচার্য এবং সহ উপাচার্যকে দেখে আসেন। দুজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন তিনি এবং তাঁদের দ্রুত আরােগ্য কামনা করেন। শিক্ষামন্ত্রী এদিন একটি ফুলের তােড়া উপাচার্যের হাতে তুলে দেন। তিনি আশাপ্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুততার সঙ্গে স্বাভাৰ্কি পরিবেশ ফিরে আসবে। তাঁর কথায়, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পড়ুয়া, শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের প্রতি দায়বদ্ধ। রাজ্যপাল একজন প্রশাসনিক প্রধান। আশা করি তিনি তাঁর পদের গরিমা রক্ষা করনে।

উপাচার্য সুরঞ্জন দাস অবশ্য শনিবারেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি বলেন, আশা করি আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের কোনও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।

এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার নিন্দা করেছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার একটি মিছিল বের করে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেরুয়াবাহিনীর তাণ্ডবের ঘটনার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রীরা পােস্টারিং সহ একাধিক ধিক্কার কর্মসুচি পালন করে ওইদিন।

বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই-আইসির তরফেও ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূলপন্থী ছাত্রছাত্রীদের তরফে ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের পড়ুয়া সুমিত চন্দ বলেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলার একটি গর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গেরুয়াবাহিনী এখানে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতির উপর পরিকল্পিত আঘাত। আগামীতে বাংলার ছাত্রযুবরা ঐক্যবদ্ধভাবে এর জবাব দেবে।