আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যে শুরু হবে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন তথা এসআইআর–এর শুনানি পর্ব। তার আগে ভোটারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত নথি আপলোডের কাজ শুরু করে দিয়েছেন বুথ লেভেল অফিসার তথা বিএলও–রা। এই আবহে শুনানি পর্বে কোন নথি গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর স্কুল থেকে প্রাপ্ত শংসাপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না।
অন্যদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়েছে ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজ্যে ইস্যু হওয়া ওবিসি সার্টিফিকেট। এই সার্টিফিকেটগুলি যেন এসআইআর–এর নথির তালিকায় গ্রাহ্য না হয় সেই মর্মে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি কৃষ্ণা রাও নির্দেশ দেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিষয়টি বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি সেই সিদ্ধান্ত ৩১ ডিসেম্বররে মধ্যে লিখিতভাবে মামলাকারীকে জানাতে হবে।
মামলাকারীর দাবি, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজ্যে ইস্যু করা ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হয়েছে। ফলে এই সময়ের মধ্যে ইস্যু হওয়া ওবিসি সার্টিফিকেগুলি যেন এসআইআর-এর নথির তালিকায় গ্রাহ্য না হয়, সেই মর্মে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন আইনজীবী অরিজিৎ বক্সী। কিন্তু কমিশন কোনও পদক্ষেপ না করায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
মামলাকারীর দাবি, বাতিল হওয়া ওবিসি সার্টিফিকেটগুলি কোনওভাবে এসআইআর প্রক্রিয়ায় বৈধ নথি হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই আইনজীবী। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সেই কারণেই কমিশনকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসআইআর–এর শুনানি পর্ব শুরু হওয়ার আগে থেকে ভোটারদের থেকে প্রাপ্ত সমস্ত নথি অ্যাপ মারফত বিএলওদের আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এর জন্য অ্যাপে নতুন একটি অপশন দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই ভোটারদের থেকে প্রাপ্ত নথি আপলোড করতে হবে। ইতিমধ্যেই এই কাজ শুরু হয়েছে। ইআরও সেই নথি খতিয়ে দেখবেন। আপাতত ২০০২ সালের তালিকায় যেসব ভোটারের নাম বা আত্মীয়ের নাম ছিল না, তাঁদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করছেন বিএলও–রা।
পাশাপাশি শুনানির নোটিসও ভোটারদের পাঠানো হয়েছে। নথির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনওরকম প্রশ্ন থাকলে অবিলম্বে তা জেলাশাসক অর্থাৎ ডিইও এবং অতিরিক্ত রোল পর্যবেক্ষকদের নজরে আনতে বিএলও–দের। গোটা শুনানি প্রক্রিয়ায় নজরদারির কাজ করবেন মাইক্রো অবজার্ভাররা। বুধবার এই মাইক্রো অবজার্ভারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করেছে কমিশন।
কমিশনের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, উল্লিখিত ১২টি নথি ছাড়া শুনানি পর্বে আর কোনও নথিই গ্রহণযোগ্য নয়। রাজ্যে অষ্টম শ্রেণি পাশ করলে স্কুল থেকে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ্য বলেই ধরা হয়। কিন্তু এসআইআর–এর শুনানিতে তা কোনও কাজে লাগবে না।
তৃণমূলের অভিযোগ, অন্তত ন’জন জীবিত ভোটারকে ‘মৃত’ এবং ‘নিখোঁজ’ দেখিয়ে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাবার নামের বানান ভুল হলেও শুনানির জন্য ডাকা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে শুনানির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসকদল। এছাড়া শুনানি পর্বে সাধারণ মানুষ যাতে কোনও অসুবিধায় না পড়েন বা টাকা খরচ না হয় তা কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছে তৃণমূল। এছাড়াও রাজ্যের বাইরে কাজ করেন এমন ব্যক্তি কীভাবে শুনানিতে যোগ দেবেন সেই প্রশ্নও তুলেছে রাজ্যের শাসকদল।