পহেলগাম থেকে ফিরল ৩ বাঙালি পর্যটকের দেহ

ফাইল চিত্র

ভারতীয় সেনার নজরদারি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে পহেলগামে পর্যটকরা জঙ্গি হামলার শিকার হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পহেলগামে জঙ্গি হামলায় মৃত ২৬ জনের মধ্যে রয়েছেন বাংলার তিন বাসিন্দা। মৃতদের মধ্যে দুই জনের বাড়ি কলকাতায়। অপর একজনের বাড়ি পুরুলিয়ার ঝালদায়। মৃত তিন জনই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জম্মু–কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁদের জঙ্গি হামলার শিকার হতে হয়। রাজ্যের এই তিন বাসিন্দার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার রাতেই তাঁদের মরদেহ রাজ্যে ফিরেছে। সঙ্গে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা।

তিন পর্যটকের দেহ রাজ্যে ফেরাতে সব রকম ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। পরিবারের সদস্যদের জন্য টিকিটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মৃত তিন জনের মধ্যে পুরুলিয়ার বাসিন্দা মণীশরঞ্জন মিশ্রের দেহ রাঁচি বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে ঝালদায় এসেছে। বাকি দুই কলকাতার বাসিন্দার দেহ বুধবার রাতে পৌঁছয় কলকাতা বিমানবন্দরে। সরকারের উদ্যোগে বিমানবন্দর থেকে বিশেষ পুলিশ পোস্টিং করে গ্রিন করিডরের মাধ্যমে মৃতদেহ ও পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। গোটা ঘটনার তদারকির জন্য বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সহ অন্যরা।

কাশ্মীরের জঙ্গি হামলার নিন্দা করে এ দিন মমতা প্রশ্ন তোলেন, সেনার নজরদারি থাকা সত্ত্বেও এরকম ঘটনা কীভাবে ঘটল? তাঁর কথায়, ‘আমি ভেবে পাচ্ছি না, এতক্ষণ ধরে বেছে বেছে মারল। ওখানে তো অনেক সেনা ছিল। এমনিতে সীমান্ত এলাকা। স্পর্শকাতর এলাকা। যাই হোক, এ সব নিয়ে এখন কথা বলব না।’ গোটা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মমতা আরও বলেছেন, বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে জঙ্গি হামলার বিষয়ে কথা হয়েছে। জঙ্গিদের কোনও জাত–ধর্ম হয় না। এরা একটা ক্লাস। জঙ্গিদের ক্ষমা করা যায় না। পুরুলিয়ার বাসিন্দা মৃত মণীশরঞ্জনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বাকি দুই মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর।


উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম কলকাতার বৈষ্ণবঘাটার পাটুলির বাসিন্দা বিতান অধিকারীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসে। মঙ্গলবার তিনি স্ত্রী সোহিনী ও সন্তানকে নিয়ে পহেলগামে ঘুরছিলেন। সোহিনীর চোখের সামনে জঙ্গিরা তাঁর স্বামীকে গুলি করে মেরে ফেলে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মসূত্রে ফ্লোরিডায় থাকতেন বিতান। কয়েকদিন আগে কলকাতার বাড়িতে এসেছিলেন। তারপর সপরিবারে জম্মু–কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আজ, বৃহস্পতিবারই তাঁদের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে মঙ্গলবারই বাড়িতে আসে দুঃসংবাদ। বিতানের মৃত্যু সংবাদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।

বিতানের পাশাপাশি জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে বেহালার সখের- বাজারের বাসিন্দা সমীর গুহর। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারি। পরিবার নিয়ে কয়েকদিন আগেই তিনি কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বুধবার ফেরার কথা ছিল তাঁদের। ফেরার আগে পহেলগামে ঘুরতে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর সমীরের স্ত্রী জানিয়েছেন, হামলাকারীদের সকলের মুখে মাস্ক ছিল। বন্দুক নিয়ে এসে সকলকে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলেছিল তারা। সেই কথা মতো সকলে মাটিতে শুয়ে পড়লে কয়েকজনকে গুলি করে জঙ্গিরা।

জঙ্গিতের গুলিতে নিহত হয়েছেন পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা মণীশরঞ্জন মিশ্র। তিনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবিতে কাজ করতেন। কর্মসূত্রে থাকতেন হায়দরাবাদে। তাঁর সঙ্গে থাকতেন তাঁর স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে। হায়দরাবাদ থেকে ১৫ এপ্রিল সপরিবারে মণীশ প্রথমে অযোধ্যায় যান। সেখান থেকে হরিদ্বার হয়ে কাশ্মীরের পহেলগামে পৌঁছন তাঁরা। সেখান থেকেই বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। মণীশের বাবা, মা ও ভাইয়ের পরিবারেরও তাঁদের সঙ্গে বৈষ্ণোদেবী যাওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার তাঁরা রওনা দেওয়ার পর মণীশের মৃত্যু সংবাদ পান।

এই তিনটি মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। মমতা জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে ফেরার আগে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করার জন্য দিল্লি বিমানবন্দরে রাজ্যের প্রতিনিধিদল সমস্ত ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি মমতা জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টি তদারকি করেছেন। এই সময়টা সকলের জন্য খুবই ভয়াবহ।