আবার স্বীকৃতি পেল বাংলার পটচিত্র। যে পটচিত্রে শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় বর্ণিত হয় জীবনগাথা। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়াগ্রামের শিল্পী স্বর্ণ চিত্রকর। তাঁর সোনার কাঠির ছোঁয়ায় জেগে ওঠে গ্রামবাংলার কাহিনী, তাঁর তুলির জাদুস্পর্শে কথামালা চিত্রিত হয় পটে, সেই স্বর্ণ চিত্রকর এবার মন জয় করে নিয়েছেন জাতীয় স্তরেও। রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত বিশেষ এক প্রদর্শনীতে তাঁকে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পুরস্কার। দেশের অন্যান্য সেরা শিল্পীদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন এই পটশিল্পীও। বাংলা থেকে একমাত্র তাঁকেই নির্বাচন করা হয়েছে এই জাতীয় স্তুরের সম্মানের জন্ম।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়াগ্রাম। এই অখ্যাত গ্রামটিকে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিতি দিয়েছে পটচিত্র। শিল্পীর হাতে রঙ আর তুলির মেলবন্ধনে যেখানে তৈরি হয় এক সুরেলা সঙ্গত। ছবি আঁকাই শুধু নয়, ছবির মধ্য দিয়ে ধরা দেয় যে ইতিহাস, যে গ্রাম বাংলার কাহিনী, মানুষের জীবনের নানান ওঠাপড়া, সুখ-দুঃখের কাহিনী, লোকমুখে প্রচলিত হয়ে আসছে যেসব লোকগাথা- বছরের পর বছর, সেইসব কাহিনী গান গেয়ে শোনান এই পটশিল্পীরা। তাই তো এখন পিংলার অন্য এক পরিচয় পটচিত্র গ্রাম হিসেবে। সেই গ্রামেরই শিল্পী স্বর্ণ চিত্রকর জানালেন, ‘জাতীয় পুরস্কার আমার হাতে উঠবে তা ভাবতে পারিনি। আমার জীবনের সবথেকে আবেগের মুহূর্ত।’ তিনি জানালেন, ২০২৪-এ তাঁকে শিল্প প্রদর্শনের জন্য মনোনীত করা হয়। আর এই বছর রাষ্ট্রপতি ভবনে তিনি তাঁর কাজ প্রদর্শনের সুযোগ পান। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নির্বাচিত শিল্পীদের সঙ্গে পটশিল্পী স্বর্ণ চিত্রকরও তাঁর শিল্পকর্ম প্রদর্শন করেন এবং মানুষকে তাক লাগিয়ে দেন।
বাংলার মাটি থেকে এর আগে জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন গুরুপদ চিত্রকর ২০০১, ২০০৭-এ জাতীয় পুরস্কার পান আনোয়ার চিত্রকর। এবার সেই তালিকায় নাম জুড়েছে স্বর্ণ চিত্রকরের। তাঁর নিজের প্রতিভা ও সৃজনশীলতাই তাঁকে পৌছে দিয়েছে দেশ তথা বিশ্বের দরবারে।
পটচিত্র এমন এক লোকচিত্রকলা,যেখানে শিল্পীর আঁকা ছবি ও গানের মধ্যে দিয়ে এক একটি কাহিনী তুলে ধরা হয়। দীর্ঘ সেই পট জড়ানো থাকে লাঠিতে। লাঠির গায়ে জড়ানো সেই পটের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে গ্রামবাংলার কাহিনী, যা ধীরে ধীরে পটুয়ারা গানের মাধ্যমে শুনিয়ে থাকেন। সেই সমস্ত লোকগাথা নিখুঁত বর্ণনা ও ছবির মধ্যে দিয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে।