গাজায় ইজরায়েলি গণহত্যা ও দমনপীড়নের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘একই কায়দায় সবক শেখানোর’ নিদান দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মন্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শুধু বিতর্ক নয়, এই মন্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান এবং বিজেপির সর্বভারতীয় রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে আদৌ সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ময়মনসিংহে সংখ্যালঘু যুবক দীপুচন্দ্র দাসের হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। সেই প্রতিবাদের ঢেউ এসে পৌঁছয় কলকাতাতেও। এমনই এক কর্মসূচিতে কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসের সামনে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ইজরায়েল যেভাবে গাজাকে শিক্ষা দিয়েছে, সেভাবেই আমাদের দেশও সবক শেখাতে পারে। অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানকে যেমন শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশকেও তেমন শিক্ষা দেওয়া উচিত।’ তাঁর এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এই মন্তব্যের পরই প্রশ্ন উঠেছে, শুভেন্দুর বক্তব্য কি বিজেপির কেন্দ্রীয় অবস্থানের প্রতিফলন? কারণ এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র সরকার বা বিজেপির প্রথম সারির কোনও নেতা প্রকাশ্যে ইজরায়েলি আগ্রাসনকে সমর্থন করেননি। বরং বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লির অবস্থান বরাবরই সংযত। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন এবং দীপুচন্দ্র দাস হত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছে ভারত সরকার। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বা কেন্দ্রের অন্য কোনও শীর্ষ মন্ত্রী এই বিষয়ে এখনও প্রকাশ্যে কোনও আগ্রাসী মন্তব্য করেননি।
এই প্রেক্ষিতেই তৃণমূল কংগ্রেস সরাসরি শুভেন্দুর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘বিরোধী দলনেতা যা বলেছেন, সেটাই কি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীর অবস্থান? যদি তাই হয়, তবে কেন্দ্র সরকারকে তা স্পষ্ট করে জানাতে হবে।’ তাঁর অভিযোগ, বিজেপি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলেই এ ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য সামনে আনা হচ্ছে।
তবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এই বিতর্ক এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘বিরোধী দলনেতা কোনও দলীয় পদ নয়, এটি একটি সাংবিধানিক পদ। মানুষের আবেগের প্রতিফলন ঘটানোই বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব। শুভেন্দু অধিকারী সেই কাজটাই করেছেন।’ তাঁর দাবি, এই বক্তব্যের সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নীতির সরাসরি যোগ নেই।
বিজেপির অন্দরমহলের একাংশ অবশ্য মনে করছে, আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করছেন শুভেন্দু। তাঁদের মতে, বাংলাদেশ, গাজা ও পাকিস্তানের প্রসঙ্গ একসঙ্গে টেনে এনে হিন্দু আবেগে শান দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য, বাংলার মানুষ উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পক্ষেই রায় দেয়, ধর্মীয় মেরুকরণে তারা বিশ্বাসী নয়।
সব মিলিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়ালেও, এই বক্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের কূটনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ— সেই প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে।