লোকসভা ভোটে রাজ্যে হিংসা রুখতে কঠোর ব্যবস্থা কমিশনের

Written by SNS March 5, 2024 1:36 pm

কলকাতা, ৫ মার্চ: হিংসা মুক্ত ভোট করতে রাজ্যকে কড়া বার্তা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের। সেজন্য ২০২৪ লোকসভা ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণার আগেই রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে কমিশন। আজ, মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিপি-র সঙ্গে বৈঠকে বসে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সেখানে রাজ্যের অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও হিংসামুক্ত ভোটের বিষয়ে রাজ্যকে কড়া বার্তা দেয় কমিশন। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকের পর আজ সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে সামগ্রিক বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়। কমিশন স্পষ্টভাবে জানায়, হিংসা রুখতে ডিএম, এসপি-দের ব্যবস্থা নিতে হবে, তারপরেও হিংসা হলে তার দায় ডিজিপি-র।

মুখ্য সচিব ও ডিজিপি-র সঙ্গে বৈঠকে কড়া বার্তা দিয়েছে কমিশনের। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ভোট হল বাংলার ১৪তম পার্বণ। রাজ্যের গণতন্ত্রের উৎসব। অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও হিংসামুক্ত নির্বাচনই আমাদের লক্ষ্য। কমিশন জানায়, রাজনৈতিক দলগুলি জানিয়েছে, রাজ্যে ভয়ের পরিবেশ রয়েছে। আমলারা নিরপেক্ষ নয়। প্রভাবশালীরা ভোট লুঠের চেষ্টা করে। সব রাজনৈতিক দল চায় শান্তিপূর্ণ ভোট। সিভিকদের দিয়ে ভোট না করানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ভোটের আগে ও পরে সন্ত্রাস রুখতে ডিএম ও এসপি-দের ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্পূর্ণ জিরো টলারেন্স পরিবেশ রাখতে হবে। এরপরেও কোনও গন্ডগোল হলে দায়ী থাকবেন ডিজিপি। গন্ডগোল হলে তার দায় ডিএম, এসপি-দেরও নিতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান রাজীব কুমার বলেন, সম্প্রতি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। সেই সব রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ভোট সন্ত্রাস রুখতে রাজ্যকে কড়া বার্তা নির্বাচন কমিশনের। কমিশন জানিয়েছে, পেশী শক্তি এবং আর্থিক ক্ষমতার ব্যবহার যাতে না হয়, সেদিকে আমরা নজর রাখব। কোনও গন্ডগোল হলে দ্রুত কমিশনকে জানানোর জন্য app তৈরি করা হয়েছে। app-এর মাধ্যমে খবর দিলে ১০০ মিনিটের মধ্যে কমিশন ব্যবস্থা নেবে। নির্বাচনের সময় অনুপ্রবেশ আটকাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রে সিসিটিভি বসানোর দাবিও উঠেছে।

এই মুহূর্তে রাজ্যে মোট বুথের সংখ্যা ৮০ হাজার ৪৫৩টি। ৮৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সের ভোটাররা চাইলে বাড়ি বসে ভোট দিতে পারবেন। কিছু মহিলা পরিচালিত বুথও থাকবে রাজ্যে। প্রতিটি বুথে শৌচালয়, পানীয় জল ও হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ প্রসঙ্গে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। নাম না করলেও রাজ্যের শাসকদলকে ইঙ্গিত করছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, একটি দল বাদে বাকিরা বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি তুলেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে মোতায়েন করা হবে। ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় মোতায়েন করা হবে, তা নির্ধারণ করবেন সিইও। তবে ভোট কেন্দ্রের বাইরের স্তরের নিরাপত্তায় থাকবে রাজ্য পুলিশ।

প্রসঙ্গত গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বিশেষ প্রতিনিধিদল। সেই দলে ছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এক দফায় ভোট এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী বাদে রাজ্য পুলিশকে দিয়ে ভোট করানোর দাবি জানিয়েছি। প্রকারান্তরে আজ সেই কথা উঠে আসে নির্বাচন কমিশনের সাংবাদিক বৈঠকে। এই বৈঠকে কমিশন জানায়, শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া সবাই বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি জানিয়েছে।

এছাড়া কমিশন জানিয়েছে, ভোট পর্ব নির্বিঘ্নে হওয়ার ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার। মুখ্য সচিব ও ডিজিপি-কে এই বার্তা দিয়েছে কমিশন। রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তাদের বলেন, আমাদের কাছে সব রিপোর্টই আছে। অধস্তন কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করবে জেলা প্রশাসন। ভুয়ো ভোটার রুখতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এবারের লোকসভা ভোটে রাজ্যকে যে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন, তা আজকের সাংবাদিক বৈঠকেই স্পষ্ট।