• facebook
  • twitter
Sunday, 14 December, 2025

এসআইআর আতঙ্কে বলি আরও ৩

জলপাইগুড়িতে আতঙ্কের কারণে এ বার মৃত্যু হল বছর ৬২-এর এক বৃদ্ধের

প্রতীকী চিত্র

ফের এসআইআর আতঙ্কের বলি। একই দিনে রাজ্যের তিন জায়গা থেকে এল মৃত্যুর খবর। জলপাইগুড়িতে আতঙ্কের কারণে এ বার মৃত্যু হল বছর ৬২-এর এক বৃদ্ধের। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় বৃদ্ধের নিজের নাম থাকলেও ছিল না দুই স্ত্রীর নাম। তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ছিলেন নরেন্দ্রনাথ রায়। শুক্রবার দুপুরে বাড়ির পাশের গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া খড়িয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা নরেন্দ্র পেশায় ছিলেন ভ্যানচালক। পরিবারের দাবি, গত কয়েক দিন ধরেই এসআইআর নিয়ে মানসিক চাপে ভুগছিলেন তিনি। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নরেন্দ্রর নিজের নাম থাকলেও, ছিল না তাঁর দুই স্ত্রী বিনোদিনী রায় এবং মিনতি রায়ের নাম।

মৃতের মেয়ে জয়তী বর্মণ জানিয়েছেন, ‘বাবা সারা দিন একটাই কথা বলতেন, এ বার আমাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবে না তো! তিন-তিন বার পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নিয়েছিলেন নাম আছে কি না। সকলেই বোঝাত, কিছু হবে না। বাবা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না।‘ মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও নরেন্দ্র রায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাড়িও ফেরেন তিনি।

Advertisement

তারপরই দুপুরের পর তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। কোতোয়ালি থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। প্রতিবেশী নরেশ বর্মণ বলেন, ‘একদম শান্ত মানুষ ছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে শুধু চিন্তায় ভুগছিলেন। আমরা সকলে বোঝালেও ভয় কাটেনি।‘

Advertisement

একই ঘটনা ঘটেছে কুলপিতেও। নির্বাচন কমিশন অনুযায়ী, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকে কুলপিতে সূচক ধরা হয়েছে। ফলে ২০০৩ সালের ভোটার লিস্টে নিজের নাম থাকলেও ছিল না স্ত্রীর নাম। সেই নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কুলপির হাইমাদ্রাসার শিক্ষক। সেই দুশ্চিন্তা থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান কুলপির বিধায়ক ও মথুরাপুরের সাংসদ। তাঁদের দাবি, এসআইআরের আতঙ্ক থেকেই মৃত্যু হয়েছে।

মৃত শিক্ষকের নাম শাহাবুদ্দিন পাইক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি বিধানসভার ঢোলা থানায় কালিচরণপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রী, চার ছেলে ও বাবা-মাকে নিয়ে থাকতেন ওই শিক্ষক। দাবি, নিজের নাম থাকলেও ২০০৩ সালের ভোটার লিস্টে নাম ছিল না শাহাবুদ্দিনের স্ত্রীর। অভিযোগ, তা নিয়ে তিনি নাকি দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার গভীররাতে মৃত্যু হয় তাঁর।

মৃত্যুর খবর পেয়েই কুলপির বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার এবং মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার শাহাবুদ্দিনের বাড়িতে যান। তাঁদের দাবি, এই মৃত্যুর দায় কেন্দ্রের। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ বিজেপি। তৃণমূল নোংরা রাজনীতি করছে বলেই দাবি পদ্মশিবিরের।

অন্যদিকে, শুক্রবার সকালে হুগলির শেওড়াফুলিতে উদ্ধার হল যৌনকর্মীর ঝুলন্ত দেহ। মৃতার নাম বিতি দাস। বয়স ৪৯ বছর। শেওড়াফুলি স্টেশন লাগোয়া গড়বাগান যৌনপল্লির বাসিন্দা ছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে ঘর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চাঁপদানির বিধায়ক তথা হুগলি শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি অরিন্দম গুঁইন, বৈদ্যবাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পিন্টু মাহাতো ও স্থানীয় কাউন্সিলর। অরিন্দম গুঁইনের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম ছিল না বিতির। ফলে দেশছাড়া হওয়ার ভয়ে কাঁটা হয়েছিলেন তিনি। সেই কারণেই নাকি এই সিদ্ধান্ত।

যদিও ওই যৌনপল্লির এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল বিতির। তারপর ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্বামী চলে যান। সকালে দেখা যায় দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। পরে উদ্ধার হয় দেহ। বিজেপির নেতা হরি মিশ্র বলেন, পারিবারিক অশান্তিতে মৃত্যু হয়েছে। পারিবারিক অশান্তিতে মৃত্যুর সঙ্গে এসআইআরকে তৃণমূল জুড়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআরের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আতঙ্কে একের পর এক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। এসআইআর ঘোষণার পর সর্বপ্রথম আত্মঘাতী হন পানিহাটির প্রদীপ কর।

এরপর বীরভূমের ইলামবাজারের ক্ষিতীশ মজুমদার, টিটাগড়ের কাকলি সরকারও আত্মহত্যা করেন। প্রত্যেকের পরিবারের দাবি, এসআইআর আতঙ্কেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। এসআইআর আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের বাসিন্দা বিমল সাঁতরা এবং হুগলির ডানকুনির হাসিনা বেগমের। আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের শেখ সিরাজউদ্দিনেরও। গত মঙ্গলবার হাওড়ার উলুবেড়িয়ার জাহির মাল ও মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখের আত্মঘাতী হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে।

বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে আত্মহত্যা করেন সফিউল গাজি। মুর্শিদাবাদের জিতেন রায় নামে এক ব্যক্তিরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এসআইআর আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল ও পরিবারের। বৃহস্পতিবার এসআইআর আতঙ্কে বহরমপুরের ব্যক্তি তারক সাহার আত্মহত্যার খবর সামনে এসেছে। গত ২৭ অক্টোবর রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সব মিলিয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement