বাংলাদেশ যখন জ্বলছে, তখন কলকাতায় এলেন আর এস এস প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর ১১ দিনের এই কলকাতা সফরে রয়েছে একাধিক কর্মসূচি। ৬ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় পৌঁছচ্ছেন সরসঙ্ঘচালক। ফিরবেন ১৭ ফেব্রুয়ারি। এর আগে এতটা দীর্ঘ বঙ্গ সফর পূর্বে দেখা যায়নি। সেজন্য বৃহস্পতিবার এই বিশেষ মুহূর্তে হিন্দু নেতার কলকাতায় আগমন নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ যোগ খোঁজার চেষ্টা করছেন। যদিও সঙ্ঘ জানিয়েছে, আরএসএস প্রধানের এই বঙ্গসফর সম্পূর্ণ পূর্ব নির্ধারিত।
তিনি ইতিমধ্যেই নিউটাউনের অতিথিশালায় ২ দফায় বৈঠকও সেরে ফেলেছেন। মূলত দক্ষিণবঙ্গের আরএসএস নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। জানা গিয়েছে, চলতি বছরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শতবর্ষ পূর্তি। সেই উপলক্ষে রাজ্যভিত্তিক একাধিক কর্মসূচি করার বার্তা দিয়েছে আরএসএস-এর নাগপুরের সদর দপ্তর। কলকাতা এবং বর্ধমানে একগুচ্ছ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা সরসঙ্ঘচালক ভাগবতের। তার মাঝেই দু’দিন ফাঁকা রাখা হয়েছে সঙ্ঘের সর্বোচ্চ কমিটি (অখিল ভারতীয় টোলি)-র বৈঠকের জন্যও। যা এ বছর কলকাতাতেই বসছে।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, মোহন ভাগবতের এবারের এই বঙ্গ সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তার প্রধান কারণ হল, আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জেরে এপার বাংলাতেও হিন্দু তথা সনাতন ধর্ম নিয়ে আবেগ ও উচ্ছ্বাস বাড়ছে। এদিকে নতুন করে জ্বলছে বাংলাদেশ। হাত পড়েছে খোদ হাসিনার বাড়িতে। অশান্তির আঁচ ছড়িয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেও। এই অবস্থায় আরএসএস প্রধানের বঙ্গে আগমণ, একইসঙ্গে দীর্ঘ সফর, তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে কি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের আবহে এপারে হিন্দু আবেগে নতুন করে শান দিতে চাইছে গেরুয়া শিবির? আরএসএস প্রধানের আগমণে সেই প্রশ্ন আরও জোরাল হচ্ছে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
প্রসঙ্গত গত বছরের আগস্ট থেকে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক হিংসায় জ্বলছে বাংলাদেশ। সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস থেকে শুরু করে একের পর এক নারকীয় হত্যার ঘটনা সামনে এসেছে। ৫ আগস্ট হাসিনার পদত্যাগের কয়েকদিন পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ গ্রহণের পরেও সেই হিংসা ও অস্থিরতায় কিছুমাত্র ভাটা পড়েনি। বার বার অশান্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি বিভিন্ন হিংসা মূলক ঘটনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও তার প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা প্রকট হয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পদদলিত হওয়ার একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে।
অন্যদিকে প্রতিবাদী হিন্দু নেতা, সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণকে অন্যায়ভাবে জেলে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে দেশের ভিতরে ও বাইরে। তারই মধ্যে বুধবার শেখ মুজিবের ধানমুন্ডির ঐতিহাসিক বাড়িতে বুলডোজার নিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, হাসিনার সুধা সদনে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ দেশের বর্তমান সরকারের ভূমিকা নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক স্তরে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা বেজে ২৫ মিনিটে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন মোহন ভাগবত। সেখান থেকে সোজা নিউটাউনের এক গেস্ট হাউসে চলে যান তিনি। সেখানেই রাতে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। আগামী ১৩ তারিখ পর্যন্ত থাকছেন রাজ্যে। আগামী ৯ ও ১০ তারিখ কেশব ভবনের সভায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। আগামী ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি সংঘের অখিল ভারতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই অনুষ্ঠানও করা হবে কেশব ভবনেই। ১৩ তারিখ বর্ধমানে একটি মিটিংয়ে যোগ দেবেন বলে খবর।