সমীক্ষার ভিত্তিতেই হবে রদবদল, টিকে থাকার মরিয়া লড়াই পুরপ্রধানদের 

সাংগঠনিক রদবদলের পর এবার পুরসভাগুলির উপরে নজর দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী মাসে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভায় পুরপ্রধান পদে নতুন মুখ আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোন পুরপ্রধানরা এই তালিকায় রয়েছেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা চলছে। শুরু হয়ে গিয়েছে আলোচনা। পদ বাঁচাতে শীর্ষ নেতৃত্বদের দ্বারস্থ হতে চাইছেন অনেকে। কিন্তু তাতে যে আর শিকে ছিঁড়বে না সেটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এই রদবদলের তালিকায় নেই কলকাতা পৌরসভা। দুই দিন আগেই দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তার আগে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন শোভন। মমতার সঙ্গে দেখা করার পর তাঁর তৃণমূলে ফেরা নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি তৃণমূলে ফিরলে তাঁকে বড় পদই দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এই নিয়ে জল্পনার আবহেই জানা গিয়েছে কলকাতার মেয়র পদে আপাতত কোনও রদবদলের সম্ভাবনা নেই। মেয়র পদে থাকছেন ফিরহাদ হাকিমই। কারণ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিসংখ্যানে ভোট যে বাড়বে সেই ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল।
সম্প্রতি ঘনিষ্ঠ মহলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে রাজ্যের একাধিক পুরসভার নেতৃত্বে বদল হতে চলেছে। কারণ গত লোকসভা নির্বাচনে শহরাঞ্চলে ভোটবাক্সে বড় ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। সেই কারণে নির্বাচনের পরেই রদবদলের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন অভিষেক। এর জন্য যাঁরা নেতৃত্বে রয়েছেন তাঁদের কাজের খতিয়ান বিচার করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন। সেই মতো রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার কাজের মান গত কয়েক মাস ধরে খতিয়ে দেখা হয়। কোথায় কত কাজ হয়েছে, কোথায় জনসংযোগে ঘাটতি রয়েছে, প্রশাসনিক সাফল্য কোথায় কত–– এসবের ভিত্তিতে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা পড়েছে অভিষেকের দপ্তরে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্যের একাধিক পুরসভায় বড়সড় রদবদল হতে চলেছে।
২০২১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৭টিতে জিতেছিল তৃণমূল। ৩টি ওয়ার্ড গিয়েছিল বিজেপির দখলে। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওয়ার্ডভিত্তিক ভোট ভাগ করতে দেখা গিয়েছে, তৃণমূল মাত্র ৯৮টি ওয়ার্ডে লিড পেয়েছে। অন্যদিকে ৩টি ওয়ার্ড থেকে বেড়ে লোকসভা নির্বাচনে ৪৫টি ওয়ার্ডে ভোটে লিড পেয়েছে বিজেপি। যাদবপুর ও টালিগঞ্জ এলাকায় ভোট বেড়েছে বামেদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও আপাতত কলকাতা পৌরসভায় রদবদলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে না। কারণ কলকাতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প কলকাতা পৌর এলাকায় তৃণমূলের ভোট বাড়াবে বলে দাবি শীর্ষ নেতৃত্বের।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনে একাধিক রদবদল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার পুরপ্রশাসনের কাজে অসফল নেতাদের সরাতে চাইছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এছাড়াও অনেক নেতাই এলাকায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার মতো কাজ করেছেন। তাঁদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সকল নেতারা খোয়াতে পারেন পদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, পারফরম্যান্স রিভিউ প্রক্রিয়াটি এবার থেকে নিয়মিত চলবে।
পুর এলাকায় দলের ভোট বাড়াতে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে তৃণমূল। দলের ভিত শক্ত করতে এই পদক্ষেপ যে বিশেষভাবে কার্যকরী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি ভোটের ময়দানে প্রস্তুতি নিতে এবং জনসংযোগ বাড়াতে পুরসভা সহ প্রত্যেকটি স্তরে কার্যকর নেতৃত্ব রাখাই প্রধান লক্ষ্য তৃণমূলের। শুধু এবার নয়, পারফরম্যান্সের মানদণ্ডে প্রত্যেকদিন নেতৃত্বকে প্রমাণ দিতে হবে। তাহলেই সে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন।