শিলিগুড়ির আকাশে রাফাল-মহড়া, কড়া নিরাপত্তায় ‘চিকেনস নেক’

উত্তরবঙ্গের আকাশে গর্জন তুলে উড়ল রাফাল যুদ্ধবিমান। শিলিগুড়ির আকাশেএকের পর এক রাফালের গতিবিধি চোখে পড়তেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কখনও একই দিকে, কখনও আবার বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসতে দেখা যায় রাফাল বিমানগুলিকে। আকাশে সাদা ধোঁয়ার দীর্ঘ রেখা দেখে অনেকেই প্রথমে ভেবেছিলেন রকেট উৎক্ষেপণ হচ্ছে। পরে জানা যায়, এটি ভারতীয় বায়ুসেনার একটি রুটিন সামরিক মহড়া।

এই মহড়ায় অংশ নেয় দুটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান।বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনার রাফাল স্কোয়াড্রন রয়েছে পাঞ্জাবের আম্বালা ও পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সূত্র অনুযায়ী, এই মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল জটিল যুদ্ধপরিস্থিতিতে রাফালের কার্যকারিতা যাচাই করা। স্থল আক্রমণ, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার এবং পার্বত্য ও সমতল, দুই ধরনের ভূপ্রকৃতিতে  অভিযান চালানোর প্রস্তুতি হিসেবেই এই মহড়া দেওয়া হয়।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই মহড়ার নেপথ্যে রয়েছে ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার কৌশল। প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই করিডরই উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে। কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় বরাবরই নজর রয়েছে চিনের। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধানের একটি বিতর্কিত মন্তব্যের পর এই অঞ্চলের নিরাপত্তা আরও কড়া করা হয়েছে।


কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, শিলিগুড়ি করিডর ঘিরে তিনটি নতুন সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে ভারত। বিহারের কিষানগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এবং অসমের ধুবড়িতে এই ঘাঁটিগুলি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘাঁটিতে অন্তত ৮০০ জন জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। প্যারা স্পেশাল ফোর্স, গোয়েন্দা ইউনিট ও আরডিএফ বাহিনীকে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে রাফাল যুদ্ধবিমান, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র এবং আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

বিশেষত চোপড়া সামরিক ঘাঁটির অবস্থান অত্যন্ত স্পর্শকাতর  বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত হওয়ায়, এখান থেকে প্রতিবেশী দেশের গতিবিধির উপর নজর   রাখা তুলনামূলকভাবে সহজ। এই প্রেক্ষাপটে শিলিগুড়ির আকাশে রাফালের মহড়া শুধু একটি রুটিন অনুশীলন নয়, বরং দেশের কৌশলগত প্রস্তুতির স্পষ্ট বার্তাও বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।