বাংলাদেশে হিন্দু হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল বেকবাগান

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ওপারে হিন্দু নিধন, এপারে তার বিরুদ্ধে আবেগঘন প্রতিবাদ। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে হিন্দু যুবক দীপু দাসকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও জ্বালিয়ে হত্যার ঘটনায় কলকাতায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার বিকেলেও বেকবাগানের কাছে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সামনে লাগাতার বিক্ষোভ দেখান সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

শুক্রবার বিকেলে চার জন সাধুকে সঙ্গে নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশ উপদূতাবাসে ডেপুটেশন দিতে যান। তাঁর বুকে ঝোলানো ছিল নিহত দীপু দাসের ছবি। প্রথমে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাঁদের আটকে দেয়। কিন্তু পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই ব্যারিকেড পেরিয়ে শুভেন্দু ও সাধুরা উপদূতাবাসের মূল গেট পর্যন্ত পৌঁছে যান। বাইরে তখন ঢাকঢোল, শঙ্খ বাজিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সনাতন হিন্দুরা। গোটা বেকবাগান এলাকা ভিড়ে ভরে যায়।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় হিন্দু যুবক দীপু দাসকে মৌলবাদীরা নির্মমভাবে হত্যা করে বলে অভিযোগ। ইউনূস সরকারের আমলে নতুন করে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের এই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সামনে ধারাবাহিক বিক্ষোভ শুরু হয়।


এই বিক্ষোভ চলাকালীন শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ আগেই একাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছিল। শুক্রবার তাঁদের জামিনের দাবিতে আলিপুর আদালত চত্বরে জমায়েত করেন সাধুসন্তরা। শঙ্খ বাজিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ জানান। শেষ পর্যন্ত ১২ জন বিক্ষোভকারীর জামিন মঞ্জুর হয়।

এদিন বিশেষ অনুমতিতে শুভেন্দু অধিকারী চার জন সাধুকে সঙ্গে নিয়ে উপদূতাবাসের ভিতরে গিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ডেপুটেশন জমা দেন। বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু প্রশ্ন তোলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ হবে কবে?’ তাঁর দাবি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইউনূস সরকারের দায়িত্ব। তা না হলে ভারত সরকার কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত আক্রমণ। সেই কারণেই তারা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নে ভারত সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপেরও দাবি তোলেন তাঁরা।

বাংলাদেশে দীপু দাস হত্যার ঘটনায় কলকাতার এই প্রতিবাদ শুধু রাজনৈতিক নয়, মানবিক প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।