শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হতে চলেছে ভোটারদের শুনানি প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর কর্মসূচির অংশ হিসেবেই এই শুনানি। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি তুঙ্গে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দপ্তরে।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দফায় ডাকা হচ্ছে সেই সব ভোটারদেরই, যাঁদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে ‘ম্যাপিং’ করা যায়নি। রাজ্য জুড়ে এমন ‘আনম্যাপড’ ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩২ লক্ষ। তাঁদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতেই এই শুনানির ব্যবস্থা।
৩২৩৪টি শুনানি কেন্দ্র, বিধানসভা পিছু গড়ে ১১টি
শুনানি প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে চালাতে গোটা রাজ্যে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৩২৩৪টি শুনানি কেন্দ্র। প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় গড়ে থাকছে ১১টি করে কেন্দ্র। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে শুনানি শুরু হবে।প্রতিটি শুনানি কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন সংশ্লিষ্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও), অ্যাসিস্ট্যান্ট ইআরও (এইআরও) এবং নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত এক জন করে মাইক্রো রোল অবজার্ভার। শুনানির পুরো প্রক্রিয়ার উপর নজরদারির দায়িত্ব মূলত এই মাইক্রো অবজার্ভারদেরই।
এই মাইক্রো অবজার্ভার নিয়োগ ঘিরেই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের বিএলএ-দের সঙ্গে বৈঠকে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই নির্বাচন কমিশন ‘দিল্লির লোক’ এনে এই পদে নিয়োগ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি শুনেছি অনেক কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। কারা তাঁরা, কোথায় কাজ করেন, কোথায় থাকেন— সব খোঁজ রাখতে হবে। আমরা সহযোগিতা করব, কিন্তু বিস্তারিত তথ্য চাই। রাজ্যকে না জানিয়ে ইচ্ছা করেই এই কাজ করছে কমিশন।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যের সিইও দপ্তর জানিয়েছে, মাইক্রো অবজার্ভার হিসেবে যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। যদিও তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী, তবে অন্য রাজ্য থেকে কর্মী আনার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেই দাবি প্রশাসনের। জানা গিয়েছে, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার জন্য প্রায় ৪ হাজার মাইক্রো অবজার্ভার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যেই কলকাতার নজরুল মঞ্চে দু’দফায় তাঁদের প্রশিক্ষণও সম্পন্ন হয়েছে।
শুনানি কেন্দ্রগুলির অবস্থানও প্রায় চূড়ান্ত। সিইও দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতায় বিভিন্ন সরকারি দফতর ও কলেজ ভবনে শুনানি কেন্দ্র করা হবে। জেলাগুলিতে শুনানি চলবে বিডিও অফিস এবং ব্লক স্তরের সরকারি দফতরগুলিতে। নির্দিষ্ট কেন্দ্রের তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলার ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসার (ডিইও)-দের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত করবেন ইআরও-রা।এই শুনানি প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল।
তাঁর কথায়, যাঁরা আনম্যাপড ভোটার হিসেবে ডাকা হয়েছেন, তাঁরা যদি শুনানির সময় বৈধ সিএএ (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) সার্টিফিকেট জমা দিতে পারেন, তাহলে তাঁদের নাম চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় রাখা হবে।
এই ঘোষণার পর ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সব মিলিয়ে, রাজ্যে শুরু হতে চলা এই শুনানি প্রক্রিয়া শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক ভাবেও অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা