১৩ ডিসেম্বর যুবভারতীতে এসেছিলেন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি। মাত্র ২০ মিনিট থেকে মাঠ ছাড়েন তিনি। এরপরেই মেসিকে দেখতে না পারার অভিযোগে যুবভারতীতে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক শতদ্রু দত্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
এবার শতদ্রু দত্তের রিষড়ার বাড়িতে হানা দিল বিধাননগর পুলিশ। রিষড়ার বাঙুর পার্কে শতদ্রুর ‘চারু সুধা’ বাড়িতে শুক্রবার সকালে যায় পুলিশ। রিষড়া থানার পুলিশের সহায়তায় মহিলা পুলিশকর্মী-সহ ৫ জন আধিকারিক শতদ্রুর বাড়িতে তল্লাশি চালায়। পরিচারিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বিলাসবহুল ওই তিনতলা বাড়ির বিভিন্ন অংশে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
এদিন বাড়িতে পরিচারিকা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না৷ বাড়ির প্রতিটি কোণে তল্লাশি চালালেও কোনও কিছু সিজ করা হয়নি বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। মেসির এই সফরে কালো টাকা ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ সেদিকটাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা৷ এদিন শতদ্রুর বাড়িতে ভোর থেকে তিন ঘণ্টা তল্লাশি চালানোর পর সকাল ৯টা নাগাদ বেরিয়ে যায় পুলিশ। তল্লাশি সম্পর্কে পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শতদ্রু দত্তের পরিবারও এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
বিধাননগর দক্ষিণ থানায় যুবভারতীর বিশৃঙ্খলার ঘটনায় পুলিশের তরফে দু’টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। সেই এফআইআরের ভিত্তিতে কালো টাকার উৎস সন্ধানে তদন্ত চালানো হচ্ছে বলে খবর। মেসির এই সফরে একশো কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছে শতদ্রুর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। সেই টাকা কীভাবে জোগাড় হল, উৎসই বা কী কীভাবে সেই টাকা মেসির কাছে পৌঁছল তা নিয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
এই অর্থের পিছনে কোনও দুর্নীতি আছে কি না, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দেখা দরকার বলে মনে করছে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। উঠছে ইডির তদন্তের দাবিও। তা ছাড়া, কত টিকিট ও পাস বিক্রি হয়েছে, মেসির সঙ্গে ছবি তোলার জন্য যে ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে, সে সবেরও হিসাব রাখা হয়নি বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই ইসিআইআর দায়ের করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। শীঘ্রই গোটা ঘটনার তদন্তে নামতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
যুবভারতীতে ভাঙচুরের অভিযোগে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বিধাননগর পুলিশ। এর আগে দু’দফায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এবার সেই ঘটনায় গ্রেপ্তারির সংখ্যা আরও বাড়ল। যুবভারতীর নানা ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই তিনজনকে। ধৃতদের নাম রাজু দাস, সৌম্যদীপ দাস এবং তন্ময় দে। বিধাননগর পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লেকটাউন এবং নাগেরবাজার থেকে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে যুবভারতীতে ভাঙচুরের অনেক তথ্য মিলবে বলেই আশাবাদী পুলিশ। যুবভারতী ভাঙচুরে মোট গ্রেপ্তারির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯-এ।
বিধাননগর পুলিশের পাশাপাশি যুবভারতীতে তাণ্ডব নিয়ে তদন্ত করছে সিটও। যুবভারতীর একাধিক ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে বিশেষ তদন্তকারী দল। কেবল ভাঙচুর নয়, যুবভারতী থেকে বহু জিনিস বাড়িতে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে দর্শকদের। সূত্রের খবর, তাদেরও ধরপাকড়ের পথে হাঁটছে সিট। তবে সিটের তরফে সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত কিছুই জানানো হয়নি।
এদিকে, যুবভারতীর ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে এক মামলায় দর্শকদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত এই সংক্রান্ত মামলাগুলিতে কী নির্দেশ দেয়, সে দিকেই তাকিয়ে সবাই।