কাটমানি ও সিন্ডিকেট নিয়ে রাজ্যকে কটাক্ষ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। (File Photo: IANS/PIB)

বাংলার মন জয়ের চেষ্টায় রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে ইংরাজি নববর্ষ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা বাংলা ভাষাতেই জানালেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। দু’দিনের সফরে রাজ্যে এসে একাধিক প্রশ্ন থেকে বিতর্ক উসকে দিয়ে গেলেন মােদি ।

১৫০ তম বর্ষে এসে নাম পরিবর্তিত হল কলকাতা বন্দরের। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর হিসাবে পরিচিতি পাবে বলে রবিবার নেতাজি ইন্ডাের স্টেডিয়ামে পাের্ট ট্রাস্টের বিশেষ অনুষ্ঠান থেকে ঘােষণা করলেন খােদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। এছাড়া বন্দরের বর্তমান কর্মচারী ও প্রাক্তনীদের পেনশন ফান্ডে ৫০১ কোটি টাকার চেক হস্তান্তরিত করেন তিনি। বন্দরের প্রাক্তন কর্মচারী দুই বরিষ্ঠ নাগরিক নাগিনা ভগত ও নরেশচন্দ্র চক্রবর্তিকেও সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল জগদিপ ধনকড় সহ কেন্দ্র ও রাজ্যের নেতা মন্ত্রীরা। তবে চোখে পড়ার মতাে বিষয়, বিশেষ অনুষ্ঠানে গড়হাজির রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জলপথে বানিজ্যিক প্রসার ও বন্দর ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে জলসম্পদকে পর্যটনের বিকাশে কাজে লাগানাের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একাদিক পরিকল্পনার রূপরেখা রাজ্যের মানুষের কাছে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কলকাতা বন্দর যে শুধু এতদিন মালবহনের কাজেই ব্যবহৃত হয়নি, বিদেশ যাত্রার সময় এই বন্দরেই দেশের মনীষীদের পদধূলি পড়েছে তাও এদিন স্মরণ করালেন নরেন্দ্র মােদি।


দেশের শিল্প বিকাশের পথপ্রদর্শক এবং এক দেশ এক বিধানের বার্তাবাহক হিসেবে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নামেই তাই বন্দরে নাম পরিবর্তিত করে রাখা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি থেকে শুরু করে ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকরের কথাও প্রধানমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্যে বার বার ঘুরে ফিরে আসে।

সমুদ্রবেষ্টিত তথা নদীমাতৃক দেশের সুযােগ সুবিধাগুলি সামনে এনে তিনি জানান, দেশের জলসম্পদ নীতি নিয়ে ২০১৪ সাল থেকেই এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। যা আগামীদিনে দেশের বানিজ্যিক সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবে। সাগরমালা প্রকল্পের আওতায় বন্দরে পরিকাঠামাে ও আধুনিকিকরণে জোর দেওয়া হচ্ছে। উপকূলীয় পরিবাহন ব্যবস্থায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা ব্যায় করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিকে নদীপথে যুক্ত করতে পরিকল্পনা রূপায়িত হয়েছে। ইতিমধ্যেই হলদিয়া ও বেনারসের মধ্যে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। জলশক্তি মাধ্যমে উত্তরপূর্বকে যুক্ত করা হবে। গঙ্গাতে বড় জাহাজ চালানাের জন্য নদীপথের গভীরতা বাড়ানাের প্রয়ােজন। এই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মােদি।

পাের্ট ট্রাস্টের অনুষ্ঠান থেকে মৎসজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি জানান, কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ পেতে পারেন। অন্যদিকে ২৫ একর জমিতে ওয়াটার ট্যুরিজম, সি-মিউজিয়াম, ওয়াটার পার্ক, ওয়াটার স্পাের্টস, অ্যাকোরিয়াম, ক্রুজ পর্যটনের বিকাশ করা যাবে। বর্তমানে ১৫০টি ক্রুজ রয়েছে, যা বাড়িয়ে হাজার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উজ্জ্বলা যােজনার আওতায় ৯০ লাখ গ্যাসের কানেকশন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৩৫ লাখ দলিত ও আদিবাসী পরিবার বলেও জানান তিনি। তবে আয়ুষমান ভারত ও প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধির মতাে কিছু জনহিতকর প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলার মানুষ। দেশের ৭৫ লাখ আয়ুষমান ভারত প্রকল্পের আওতায় এসেছে। যার মাধ্যমে দুরারােগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তরা বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযােগ পাচ্ছে। ৮ কোটি গরিব কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ঢুকেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সরকারি সাহায্যের সরাসরি সুযােগ পাচ্ছেন তারা।

ওস্তাদের মার শেষ রাতের মতাে করেই বক্তৃতার শেষ লগ্নে এসে তিনি সরাসরি শেষ দানটি বাড়িয়ে দিলেন। নরেন্দ্র মােদি বাংলার সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘আয়ুষমান ভারত ও প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি এখানে করতে দেবে কিনা ওরা আমি জানি না। এইসব প্রকল্পের অর্থ সরাসরি গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে যায় বলে কাটমানি বা সিন্ডিকেটের সুযােগ নেই। ফলে এই রকম কোনও যােজনা কেউ কেন চাইবে চালু করতে?’ এই প্রশ্ন তুলে বাংলার সরকারকে কটাক্ষ করে গেলেন নরেন্দ্র মােদি।