পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থায় যুক্ত হল আরও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এবার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ব্যবহার করেই বিনামূল্যে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের সুযোগ মিলবে সরকারি হাসপাতালে। রাজ্য সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তে থ্যালাসেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, ব্লাড ক্যান্সার, লিম্ফোমা ও মাইলোমার মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত বহু রোগী উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি হাসপাতালে প্রথম বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট শুরু হলেও বেসরকারি হাসপাতালে ট্রান্সপ্লান্টের সংখ্যা অনেক বেশি।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ৯টি হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়, যার মধ্যে ২টি সরকারি হাসপাতাল। পূর্ব ভারতে প্রথম এই চিকিৎসা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে, কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। ২০১১ সালে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও চালু হয় এই পরিষেবা। তবে এতদিন পর্যন্ত বেশির ভাগ ট্রান্সপ্লান্টই হতো বেসরকারি হাসপাতালে, যেখানে চিকিৎসার খরচ পড়ে প্রায় ৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকা।
এনআরএস-এর হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তুফানকান্তি দলুই বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে আগামী দিনে ৬০ জন রোগীর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের পরিকল্পনা রয়েছে।’ তিনি জানান, এনআরএস কর্তৃপক্ষই স্বাস্থ্যসাথী স্কিমে এই চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলে রাজ্য সরকারকে। হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাজীব দে বলেন, ‘বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টই হল থ্যালাসেমিয়া ও রক্তঘটিত জটিল রোগগুলির জন্য সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা। সাত বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগীর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করলে সাফল্যের হার প্রায় ৯০ শতাংশ।’
এখনও পর্যন্ত বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এমন রোগীর সংখ্যা ১৪৫। বাইপাসের ধারে সল্টলেক সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাপালোয় রোগীর সংখ্যা এই মুহূর্তে ২৫৬। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ১০৫ জন রয়েছেন, যাঁদের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হবে। টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হবে, এমন রোগীর সংখ্যা ৮৮৭। অন্যদিকে ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের অপেক্ষায় ১৩৪ জন রোগী।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে এই অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসার দরজা খুলে যাওয়ায় রাজ্যের বহু পরিবার এবার নতুন আশার আলো দেখছে। চিকিৎসকদের মতে, এটি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।