করোনা রুখতে সহজ দাওয়াই নোবেলজয়ী অভিজিতের

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: Twitter / @PandaJay)

করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের জন্য কোভিড পলিসি তৈরি করতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শীর্ষে রেখে সোমবারই কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। চব্বিশ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার বিকেলে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে টেলিভিশন স্ক্রিনে ভেসে উঠল নোবেলজয়ীর মুখ, সুদুর মার্কিন দেশ থেকে শোনা গেল অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠস্বর।

গ্লোবাল টাইমটেবিল অনুযায়ী আমাদের দেশে যখন বিকেল পাঁচটা, আমেরিকায় তখন ভোর রাত। সেই সময়ই ঘুম ছেড়ে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে টেলিযোগাযোগের জন্য তৈরি ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। বাংলায় করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারকে একগুচ্ছ পরামর্শ দিলেন। নোভেল করোনাভাইরাস রুখতে খুব সহজ কতগুলি সতর্কতা ও সচেতনতার টিপস দিলেন নোবেলজয়ী।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানালেন এত ভোরে উঠে নবান্নের এই সাংবাদিক সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য। অভিজিৎ বিনায়ক বলেন, অন্য সময় কথা বলতে পারলে ভালো লাগত। তবে এখন সংকটের সময়। এই সময়ে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকা উচিত। আতঙ্কিত হলে আমাদের সহজ বিচারবুদ্ধি নষ্ট হয়।


অভিজিৎ বিনায়ক বেশ কয়েকটি প্রামর্শ দিয়েছেন। যেগুলির জন্য খুব একটা অর্থব্যায়ের প্রয়োজন নেই, কেবল বুদ্ধি খরচ করতে পারলেই যথেষ্ট। অভিজিৎবাবু তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, নর্থ কোরিয়া এবং তাইওয়ান ইত্যাদি দেশগুলি করোনা ঠেকাতে কতগুলি সহজ পন্থা নিয়েছে। সেইসব পদক্ষেপ অনুসরণ করা উচিত।

নোবেলজয়ী বলেন এখন যে বাজারগুলি খোলা আছে, সেখানে যাতে সবাই মাস্ক পরেন, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক না পাওয়া গেলে কাপড় দিয়েই মাস্ক বানানো যেতে পারে। বাজারে ঢোকা ও বেরনোর সময় স্যানিটাইজেশন বা হাত ধোয়ার বন্দোবস্ত রাখতে হবে। চাল, সব্জি বাজার, কিষাণ মাণ্ডি এরকম সব বাজারে যাওয়ার আগেই হাত ধুতে হবে। স্যানিটাইজার না পাওয়া গেলে সাবান এবং জল দিয়েও হাত ধোয়া যেতে পারে। এজন্য ঘটি বা জল রাখার পাত্র বাজারে ঢোকার সামনে রাখা যেতে পারে।

বাজারে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য কোরিয়া বা অন্যান্য কোভিড সচেতন দেশের মতো ইট রেখে দিয়ে একটা লক্ষণরেখা টানা থাকলে ভালো। যেমনটা আপনি আগে করে দেখিয়েছেন। মানুষের মনের মধ্যে থেকে ভয় কাটাতে হবে। কারণ করোনা মানেই যে সবক্ষেত্রে জীবনহানি ঘটছে তা নয়। চোখে মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

অভিজিৎবাবু বলেন, বাংলায় এই সময় এমনিতেই সর্দি কাশি হয়ে থাকে। তবে কারো হয়তো জ্বর নেই, কিন্তু তিনি কাশছেন, এক্ষেত্রে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। কাশির উপসর্গ রয়েছে কিন্তু হয়তো তিনি করোনা আক্রান্ত নন, সেক্ষেত্রে একটা রিপোর্টিং-এর উদ্যোগ নিতে হবে। এই কাজে আশাকর্মীদেরও কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, হয়তো কিছু ভুল রিপোর্টিং হতে পারে, কিন্তু তা হলেও রিপোর্টিং স্ট্রাকচারটা আগে থেকে তৈরি করতে পারলে সাবধান হওয়া যাবে। কাশির উপসর্গ থাকলেই পরীক্ষা করাও জরুরি।

সন্দেহপ্রবণ অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে। করোনা মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারের ফান্ডেও সাহায্য করা সকলের উচিত বলে অভিমত অভিজিৎবাবুর। এদিন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক কুশল কামনা করে বলেন, আমরা তো গৃহবন্দি থেকেই কাজ করছি। কিন্তু আপনি যেভাবে চারিদিকে ছুটে যাচ্ছেন, আপনার জন্য চিন্তা হয়।

নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়কের এই সুপরামর্শে ও সহৃদয়তায় আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী। অভিজিবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনার পরামর্শ আমাদের কাজে লাগবে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের আশাকর্মীদের করোনা প্রতিরোধের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। শিগগির একটা অ্যাপও আনা হবে। যেখানে করোনা সচেতনতায় বার্তা দেওয়া হবে।

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গড়া অ্যাডভাইসরি বোর্ড ফর কোভিড রেসপন্স পলিসি ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল শীর্ষক কমিটিতে আরও কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের নাম ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. স্বরূপ সরকার, আহ্বায়ক ডা. অভিজিৎ চৌধুরী, ডা. সুকুমার মুখার্জি ছাড়াও যাদের নতুন করে এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হল তারা হলেন সিডিসি’র প্রাক্তন চিফ টম ফ্রেইডেন, বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ জিষ্ণু দাস, ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব জে ভি প্রসাদ রাও, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট, ইউএনএআইডিএস সিদ্ধার্থ দুবে।

লকডাউনের সময় তাদের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ বজায় থাকবে। লকডাউন উঠে গেলে তারাও বাংলায় আসতে পারেন বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা আবহের মধ্যেও বাংলার সঙ্গে বিশ্বের সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্ববাংলার ভাবনাকেই এগিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।