তিনতলা বাড়ি নির্মাণে প্রয়ােজন নেই প্ল্যান অনুমােদনের, ঘােষণা মেয়রের

ফিরহাদ হাকিম (Photo: IANS)

তিন কাঠা জমির ওপর তিনতলা পর্যন্ত বাড়ি করতে পুরসভার থেকে নিতে হবে না বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমােদন। নতুন বছরের আগে শহরবাসীকে এমনই ‘উপহার’ দিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সােমবার তিনি জানান, বিল্ডিং প্ল্যান অনুমােদন পাওয়ার পদ্ধতি বিস্তর সময়সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর ৩ তলা পর্যন্ত বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে আলাদা করে পুরসভার থেকে বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমােদন নিতে হবে না। তবে কোনও আবাসন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযােজ্য নয় বলেই স্পষ্ট জানান তিনি।

সােমবার মেয়র পারিষদ বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমােদন পেয়েছে।প্রসঙ্গত, এতদিন পর্যন্ত শহরে বাড়ি তৈরি করতে গেলে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ থেকে বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমােদন নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। এমনকি মিউটেশন সার্টিফিকেটও আবশ্যক বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে। মিউটেশনের সময়ই বকেয়া সম্পত্তি কর আদায় করে নেয় পুরসভা। কিন্তু বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমােদন পাওয়ার জন্য কালঘাম ছুটত সাধারণ মানুষের। এই পদ্ধতি ছিল বিস্তর সময়সাপেক্ষও। তাই সাধারণ মানুষকে অহেতুক হয়রানির হাত থেকে রেহাই দিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন মেয়র।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাড়ি তৈরির জন্য নকশা জমা দেবেন পুরসভার নথিভুক্ত ‘লাইসেন্স বিল্ডিং সার্ভেয়ার’ (এলবিএস)-রা। এছাড়াও মিউটেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার দায়িত্বও থাকছে এলবিএসদের ওপরেই। যে প্ল্যান তিনি পুরদফতরে জমা দিয়েছেন, সেই মােতাবেকই নির্মাণ কাজ হবে এবং বিল্ডিং-এর কাঠামাে সুরক্ষিত থাকবে, এই মর্মে একটি মুচলেকাও জমা দিতে এলবিএসকে। অনলাইনে করা যাবে আবেদন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে জমা দেওয়া প্ল্যান মােতাবেক বিল্ডিং-টি তৈরি করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিল্ডিং-টি তৈরি হওয়ার পর তা পর্যবেক্ষণ করবেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের একটি দল।


মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, যদি বিল্ডিং-এর কাঠামাে ও স্থায়ীত্বগত কোনও ত্রুটি থাকে অর্থাৎ বিল্ডিং-এর কোনও অংশ ভেঙে পড়ে, কোনও দুর্ঘটনা ঘটে বা জমা দেওয়া নকশার বাইরে গিয়ে নির্মাণ করা হয়, সেক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত এলবিএস-এর লাইসেন্স বাতিলের পথে হাঁটবে পুরকর্তৃপক্ষ। মধ্যবিত্ত মানুষের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত বলে দাবি মেয়রের।

যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরােধীরা। শুধুমাত্র ভােটবাক্সের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত বলে তােপ দেগেছেন তারা। কলকাতা পুরসভায় বাম দলনেত্রী রত্না রায় মজুমদার এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরােধিতা করে বলেন, যদি সাধারণ মানুষের হয়রানি কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেক্ষেত্রে বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমােদন কিভাবে কম সময়ে করা সম্ভব সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়ােজন ছিল। প্রয়ােজনে প্ল্যান অনুমােদনের জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ কমানাের বিষয়টি নিয়েও ভাবনা চিন্তা করা যেত বলে দাবি করেন রত্নাদেবী।

তাঁর কথায়, এই সিদ্ধান্তের ফলে অপরিকল্পিতভাবে ব্যঙের ছাতার মতাে বাড়ি গজিয়ে উঠবে শহরে। এদিকে বিজেপি কাউন্সিলর মীনা দেবী পুরােহিতের প্রশ্ন, সমস্ত দায়িত্ব এলবিএস-দেরই বহন করতে হয়, সেক্ষেত্রে পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা কি করবেন? তিনি আরও দাবি করেন, সুযােগ বুঝে এলবিএস-রাও মােটা অঙ্কের অর্থ হাঁকাবেন। যার জন্য আরও বিপাকে পড়বেন সাধারণ মানুষ।