নববর্ষের আনন্দ উল্লাস করোনার লকডাউনের করাল গ্রাসে

দেশজুড়ে লকডাউন (File Photo: AFP)

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। করোনা, লকডাউনের ডবল আক্রমণে আজ সবই জলাঞ্জলি হতে চলেছে। এর মধ্যে চৈত্রের গাজন, চৈত্র সেল, নববর্ষ এবার আর পালনের কোনও আশা নেই। লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষের হাহুতাশের দীর্ঘশ্বাস ভগবানের দরবারে পৌঁছতে পারছে কিনা বোঝা শক্ত।

তবে দিদি বলে দিয়েছেন, ঘরে বসেই নববর্ষ পালন করুন। রাজ্যজুড়ে চৈত্র সেলের যে ব্যবসা চলে তাতে সারা বছরের বিক্রি বা লেনদেনের একটা বৃহৎ অংশ ধরা থাকে। তা আজ কলকাতার হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, সোদপুর অঞ্চলগুলি ঘুরে দেখলেই বোঝা যায় সকল আশা মাঠে মারা গিয়েছে। ব্যবসার চরম ব্যস্ততম অঞ্চল বড়বাজার আজ স্তব্ধ মৃত শরীরের মতো পড়ে রয়েছে।

এর ওপর নববর্ষ পালনের জন্য খেরোর খাতা তৈরি করেন যে সকল ব্যবসাদার, তাদের ব্যবসা এবার চৌপাট হতে বসেছে। করোনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও এবং লকডাউনের কড়াকড়ি থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে খেরোর খাতার জন্য কাগজ সংগ্রহ করে লোক লাগিয়ে খাতা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে হালখাতার অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। কারণ কেউই বাড়ির বাইরে বেরোতে পারবেন না।


সোশ্যাল ডিসটান্সিং বজায় রাখা জরুরি। এতে খাতা ব্যবসায়ীরা তাদের সারা বছরের ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হলেন। তাদের আর্থিক অবস্থা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। অভাবীকৃষকের মতো বাকিতে কাগজ কিনে এনে আশার ওপর নির্ভর করে ঝুঁকি নিয়ে যে সকল ব্যবসায়ী হালখাতার জন্য খাতা বানিয়েছিলেন তারা চরম ঋণের ফাঁদে পড়ে গেলেন। এখন তারা এই ঋণের হাত থেকে কিভাবে বাঁচবেন।

পুরুত ঠাকুরদের হাল কি হল তা বলাই বাহুল্য। এসময় তাদের জজমানি করে বেশ কিছু অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রি লাভ হয়ে থাকে। এতে তাদের জীবন জীবিকা চালিয়ে নিতে পারেন বেশ কিছু সময় পর্যন্ত। কিন্তু লকডাউনের কল্যাণে আজ সবই স্তব্ধ।

বাংলার নববর্ষ তো শুধু একটা অনুষ্ঠান নয়, তা তার সংস্কৃতি। বৈশাখ মাস নতুন আশার বাণী নিয়ে হাজির হয় বাঙালির ঘরে ঘরে। সারা বছরের একটা খসড়া প্রস্তুতি রচনা করা হয়। মানসিক স্থিতি রক্ষার একটা ব্রত পালন করাই এই অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান উপজীব্য। এসময় বাংলার ক্রীড়া, পূজা পার্বনেরও একটা রূপরেখা তৈরি হয়। কিন্তু সবই আজ করোনার করাল থাবায়। লকডাউনের গ্রাসে।