কাউন্সিলর হওয়ার যোগ্যতা নেই মোদির : মমতা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির যোগ্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে তােপ দেগে তিনি বলেন, ‘ওনার তাে কাউন্সিলর হওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র দাঙ্গা করে টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন’। প্রধানমন্ত্রী নিজের ক্ষমতা প্রয়ােগ করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করলেও তিনি ভয় পান না বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Written by SNS Purulia | May 9, 2019 11:37 am

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির যোগ্যতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতর সমর্থনে বুধবার পুরুলিয়ায় পরপর দুটি জনসভা করেন তিনি। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে তােপ দেগে তিনি বলেন, ‘ওনার তাে কাউন্সিলর হওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র দাঙ্গা করে টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন’। প্রধানমন্ত্রী নিজের ক্ষমতা প্রয়ােগ করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করলেও তিনি ভয় পান না বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।

বুধবার বেলা আড়াইটে নাগাদ তিনি প্রথম জনসভাটি করেন হুড়ার লধুড়কা চণ্ডেশ্বর ময়দানে। দ্বিতীয়টি ঝালদা ২ নং ব্লকের বামনিয়া এলাকায়। দু’জায়গাতেই মূখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকারের সময় জেলার উন্নয়নের তালিকা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে নিজস্ব ধরনে আক্রমণ করেন।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে পুরুলিয়ায় জল সমস্যা সমাধানে তাঁর প্রকল্পগুলির কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পায়নের স্বার্থে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে ছড়রায় বিমানবন্দর হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি হয়ে গেলে শিল্পের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাবে পুরুলিয়া। এই উন্নয়নের জন্য তাঁর হাত শক্ত করার কথা বলেন। বিজেপি উন্নয়ন থমকে দিয়েছে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই রাজ্যের সংস্কৃতি অন্যরকম। পুরুলিয়ায় শান্তির পরিবেশ নষ্ট করতে চায় তারা।

নরেন্দ্র মােদি বুধবার পুরুলিয়ায় জনসভায় অংশগ্রহণ করতে আসছেন। মােদির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে এই জেলার জন্য কিছু করেনি বিজেপি। কেন্দ্রে থাকাকালীন রেল সহ নানা উন্নয়ন করেছিলেন তিনি। মাওবাদীদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, মাওবাদীদের সময় একবারও দেখা যায়নি বিজেপিকে। জঙ্গলমহলের শান্তি ফিরিয়ে এনেছে তৃণমূল সরকার।

নিজের বক্তৃতায় দফায় দফায় মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণ করেন পদ্ম শিবির ও নরেন্দ্র মােদিকে। ধর্ম ও সংস্কৃতির উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘বিজেপির দেবতাকে ঢুকতে দেবে না। সবাই নিজের নিজের আরাধ্যকে পুজো করবে। বিজেপি একটা ছবি নিয়ে আসবে, না হলে একটা মূর্তি বসিয়ে দেবে। তারপর বলবে পুজো কর। এটা চলবে না।’

পুরুলিয়ায় মাহাতদের সঙ্গে আদিবাসীদের সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করছে বিজেপি দাবি করে তিনি বলেন, বেশ কিছু নেতা রয়েছে, যারা বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই বিভাজনে উৎসাহ দিচ্ছে। এদিন অবশ্য বিজেপির মতাে অতটা না হলেও সিপিএম ও কংগ্রেসকেও ছেড়ে কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। এই দুই দলের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন সিপিএম এখন বিজেপির বন্ধু হয়ে গেছে। ৩৪ বছর অনেক অত্যাচার করেছে। সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি এখন একসঙ্গে কাজ করে।’

কংগ্রেস বা সিপিএমকে ভােট নিলে বিজেপি’র লাভ হবে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটা ভােটের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এই ভােট তৃণমুল পেলে দল দিল্লি দখল করবে। লধুড়কার সভায় এমন কথা বলার পর ঝালদাতেও মমতা কংগ্রেসকে ভোট না দেবার জন্য বলেন। কারণ এই রাজ্যে কংগ্রেস জিততে পারবে না। এদিন দু’জায়গাতেই মৃগাঙ্ক মাহাতকে বিপুল ভােটে জয়ীকরার আবেদন জানান তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরুলিয়ায় আকেটি জনসভা করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়ায় গাড়ি থেকে নেমে বিজেপি কর্মীদের তাড়া করেছিলেন। গতকাল বলেছিলেন বিজেপির স্লোগান মানি না, বলি না। আজ ডেবরায় কর্মীদের জন্য বিকল্প স্লোগান তৈরি করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘জয় বাংলা’, ‘জয় মা’।

বুধবার ডেবরার গোদাবাজারে টাল লােকসভা আসনে দলীয় প্রার্থী দেবের সমর্থনে আয়ােজিত সভায় মমতা বলেন, নরেন্দ্র মােদির নেতৃত্ব দিল্লিতে ফ্যাসিস্ত সরকার চলছে। এই সরকার দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, ধর্ম, ইতিহাস সব নষ্ট করে দিচ্ছে। এই সরকারকে পরিবর্তন করতে হবে।

দুদিন ধরেই বঙ্গ রাজনীতি সরগরম ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে। মােদি এবং অমিত শাহ দু’জনেই বাংলায় এসে মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সভায় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়েছেন। সেই চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প স্লোগান বলেই মনে করছে রাজনৈতিক স্লোগান।

মমতা বলেন, আমরা একলা নই, সব বন্ধুদের নিয়ে দিল্লিতে সরকার গড়ব। বিজেপির আসন সব জায়গায় কমবে। বাংলার রসগােল্লা পাবে। আমাদের চৌকিদার চাই না, দেশপ্রেমী চাই। মানুষের মধ্য দাঙ্গা বাধিয়ে, ভাগাভাগি করে এরা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। দাঙ্গাবাজদের আমরা চাই না। মোদি দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ।

তীব্র গরম উপেক্ষা করে হাজার দশ-বারা মানুষ এদিন জমায়েত হন। উপস্থিত ছিলেন অজিত মাইতি, মানস ভুইয়া, প্রদীপ কর, বিবেক মুখােপাধ্যায়, নির্মল ঘােষ, রমা গিরি প্রমুখ।