অবশেষে সেই আশঙ্কায় সত্যি হল। পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ায় বহু ভোটারের নাম বাদ পড়তে চলেছে। ইতিমধ্যে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের প্রায় ২৬ লক্ষ ভোটারের হদিশ মিলছে। এই ভোটাররা রাজ্যের চলমান এসআইআর প্রক্রিয়ায় এযাবৎ ম্যাচিং হওয়া ৬ কোটি ভোটারের মধ্যেই রয়েছে। অথচ তাদের হদিশ না মেলায় যথেষ্ট রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল সংখ্যক ভোটার তাহলে গেল কোথায়? এ সবগুলিই কি মৃত ভোটার, নাকি এর মধ্যে ভুয়ো ভোটারও রয়েছে? কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জমা পড়া এমুনারেশন ফর্মের ম্যাচিং যত এগোবে, এই সংখ্যা ততই বাড়বে। কমিশনের এক কর্তা নিজেই একথা জানিয়েছেন। নতুন নির্দেশিকায় কমিশন জানিয়েছে, ম্যাচিংয়ের সময় অনলাইনে নাম না মিললে ছাপানো ভোটার তালিকার সাহায্যও নেওয়া যাবে।
এদিকে এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট চাপে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কারণ নিজেদের চাকরির পাশাপাশি অপরিকল্পিত এসআইআর প্রক্রিয়া চালাতে গিয়ে যথেষ্ট সমস্যায় পড়েছেন রাজ্যের বিএলও’রা। তাঁদের এই প্রবল কাজের চাপে শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপও বাড়ছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএলও’র মৃত্যু ও অসুস্থতার খবর নিয়ে রাজ্যের শাসকদল ও কমিশনের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ক্ষোভ বাড়ছে বিএলও-দের মধ্যেও। তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও যথেষ্ট চিন্তিত। এরই মধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এসআইআর প্রক্রিয়ায় কমিশনের বিশেষ অ্যাপটি ঠিকমতো কাজ করছে না। অধিকাংশ সময়ে প্রযুক্তিগত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বারাসত শহরে কর্মরত এক বিএলও অরিন্দম দে জানিয়েছেন, অধিকাংশ দিন দশঘন্টা কাজ করেও সাকুল্যে ৫০টি ফর্মেরও কাজ করতে পারছেন না।
Advertisement
ফলে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সীমিত সময়ের মধ্যে এই পাহাড়প্রমাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সত্যিই খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। সাঁড়াশি চাপে পড়ে কমিশনও বাধ্য হয়ে বিকল্প পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। দেশের ১২টি রাজ্যে শুরু হওয়া এসআইআর প্রক্রিয়ায় বিএলও-দের মৃত্যু ও অসুস্থতা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দেরিতে হলেও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে কমিশন। পদক্ষেপ অনুসারে, ইতিমধ্যে দিল্লি থেকে তিন জন আধিকারিককে এসআইআর পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য রাজ্যে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই তিনজন আধিকারিক হলেন প্রধান সচিব বি সি পাত্র, সচিব সৌম্যজিৎ ঘোষ এবং অবর সচিব বিবর আগরওয়াল। রাজ্যের সিইও মনোজ আগরওয়ালের অধীনে এই তিনজন আধিকারিক কাজ করবেন।
Advertisement
অন্যদিকে, সোমবার সিইও দপ্তরের ভিতরে ঢুকে বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটির অবস্থানে বসে পড়া এবং তার জেরে হওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ কমিশন। কমিশনের সচিব সুজিতকুমার মিশ্র বুধবার কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের ‘অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট’ অবশ্যই কমিশনে পাঠাতে হবে।
এদিকে বাড়তে থাকা চাপের মধ্যে এদিনও তিনজন বিএলও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় এক বিডিও-র শারীরিক অসুস্থতায় তাঁকে পিজি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সুশান্ত শিকদার নামে আরও এক বিএলও। তাঁর বয়স ৫৭। পরিবারের দাবি, সুগার ও রক্তচাপের সমস্যায় ভোগা সুশান্তবাবু এসআইআর-এর অতিরিক্ত চাপে যথেষ্ট মানসিক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। স্ত্রী সুমিতা শিকদারের কথায়, ‘টেনশনে রাতের ঘুম উধাও হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।’ প্রথমে তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে কল্যাণী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় ফরিদা খাতুন নামে এক বিএলওকে মোট ৮১২টি ফর্ম বিলি করে ৪৫০টি ফেরত আনলেও অসুস্থতার কারণে বাকিগুলি সংগ্রহ করতে পারেননি। দায়িত্ব পূরণ না করতে পারায় কমিশনের তরফে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ফর্মের ডিজিটাইজেশনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। সেজন্য তাঁর বিরুদ্ধে শোকজ জারি করেছে কমিশন।
Advertisement



