ফুসফুসের অসুখ সিলিকোসিসে আক্রান্ত ঝাড়গ্রামের বহু যুবক

পরিবারগুলির সরকারি কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি।অত্যন্ত দরিদ্র ও প্রান্তিক সীমান্তে বাস করছে পরিবারগুলি অনেকেই সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পর্যন্ত পাইনি বলে অভিযোগ।

Written by SNS ঝাড়গ্রাম | June 21, 2022 4:54 pm

ফুসফুসের অসুখ সিলিকোসিসে আক্রন্ত হয়েছেন ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন ব্লকের বহু যুবক। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

অভিযোগ আক্রন্ত ও মৃতের পরিবারগুলির সরকারি কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি । কম বয়সে অনকে যুবক মারা গিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অত্যন্ত দরিদ্র ও প্রান্তিক সীমান্তে বাস করছে পরিবারগুলি অনেকেই সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পর্যন্ত পাইনি বলে অভিযোগ।

এদিকে রাজ্য সরকার নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী সিলিকোসিস আক্রান্তদের এবার থেকে চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে শ্রম দফতর। এই নির্দেশিকার পর ঝাড়গ্রাম শ্রম দফতর খুব দ্রুত জেলা জুড়ে সিলিকোসিস আক্রান্তদের চিহ্নিত করতে সমীক্ষা শুরু করবে।

শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে প্রাথমিকভাবে দফতর স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করবে ওই রোগে আক্রন্তদের সম্পর্কে জানাতে। এরপরেই এলাকা জুড়ে সমীক্ষা চালাবে এবং আক্রান্ত রোগীদের চিহ্নিত করার পরেই তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।

বিভিন্ন সামজ কর্মীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে ২০১৬-১৭ সাল নাগাদ নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল, খড়ড়্গপুর এলাকার বহু অল্প বয়সী যুবক ঝাড়খন্ডের শালিগ্রাম সুপার সিলক প্রাইভেট লিমওটেড কম্পানিতে কাজ করতে গিয়েছিল। মূলত এরা পাথর গুরো তৈরির কাজ করত।

আক্রান্ত ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে এরপর তারা প্রবল অসুস্থা নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। দিনে দিনে শীর্ণকায় চেহারা হয়ে যায় তাদের। স্থানীয় হাসপাতালে , বাইরে চিকিৎসা করিয়েও কোন ফল হয় নি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছে তারা অনেকেই।

২০১৯ – এর পর থেকে নয়াগ্রামের ডাহির ৩ জন এবং সাঁকরাইল ব্লকের দুজন সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যায় বলে সমাজ কর্মীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। নয়াগ্রাম ব্লকের দেহি গ্রামের বছর পঁচিশের কলেজ পড়ুয়া তাপস দন্ডপাট বছর দেড়েক ভোগার পর ২০২০ সালে মারা যায়।

তাপসের চিকিৎসার জন্য কটক , কলকাতার পিজি , দিল্লীর এমস পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল তার পরিবার। তাপসের বাবা গোপাল দন্ডপাট একজন সমাজ কর্মী। তিনি এবং মৃত আরো চারটি পরিবারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার কমিশনে মামলা করেছিলেন।

কিন্তু অভিযোগ পরিবারগুলি আজও কোন সরকারি ক্ষতিপুরন পায়নি। গোপাল বাবু চোখের সামনে পরপর এই ঘটনা দেখে একটি সমীক্ষা করেছেন তিনি জানান নয়াগ্রাম ব্লকের ডাহি গ্রামে ১১ জন সিলিকেসিসে আক্রান্ত।

এক জন হাসপাতালে ভর্তি খড়্গপুরের ন্যাড়ামারা গ্রামে ২২ জন আক্রন্ত। এক জন মারা গিয়েছে। গোপাল দন্ডপাট বলেন আমার একমাত্র ছেলে মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে সিলিকোসিসে মারা গেল চেষ্টা করে বাঁচাতে পারিনি। এখনো গ্রাম ডাহিতে ১১ জন এবং খড়্গপুরে বাইশ জন আক্রান্ত।

ডাহি গ্রামের তিন জন ও সাঁকরাইল ব্লকের দুজন মারা গিয়েছে পরিবারগুলির আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ যার জন্যই তো এদের পরিবারের ছেলেরা বাইরে কাজে গিয়েছিল এরা সরকারি ক্ষতিপূরণ সহ কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পর্যন্ত পায়নি এরা।

আমরা পাঁচটি পরিবারের যাদের বাড়ির সন্তান মারা গিয়েছে তারা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে মামলা করেছি। কিন্তু কোন ফল পাইনি।

সরকারের কাছে আমাদের একটাই আর্জি এমন ব্যবস্থা করুন যাতে ভিন রাজ্যে কাজে যেতে না হয় পাশাপাশি যারা সিলিকোসিস আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ এবং আর্থিক ভাতার ব্যবস্থা করা হোক সমাজ কর্মী , দক্ষিনবঙ্গ মৎসজীবি ফোরামের সদস্য ঝর্না আচার্য বলেন, যেলো বছরের কিশোর পর্যন্ত মারা গিয়েছে গোপালবাবুর কলেজ পড়ুয়া একমাত্র ছেলে মারা গিয়েছে।

জঙ্গলমহলের মানুষদের খাদ্য , কর্মসংস্থান ও বাসস্থান নিয়ে সরকারের আরো সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন আছে যাতে কাজের জন্য ভিন রাজ্যে যেতে না হয় সেই দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

ঝাড়গ্রাম শ্রম দফতরের ডেপিটি লেবার কমিশনার ( পি প্রিয়াঙ্ক ব্যানার্জী বলেন সিলিকোসিস আক্রান্তদের চিকিৎসার দায়িত্ব আমাদের দফতরের অধীন রয়েছে আমরা দ্রুত সমীক্ষা শুরু আক্রান্তদের চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।

ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন এই সংক্রান্ত আমাদের বোর্ড রয়েছে আমরা আমরা সিলিকোসিস আক্রান্তদের চিকিৎসার প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করি। প্রয়োজনে মেদিনীপুর বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।