মমতার নিশানায় ঘরশত্রু বিভীষণ পূর্ব মেদিনীপুরে আসতে আগে অনুমতি নিতে হত, আজ আমি স্বাধীন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: SNS)

শুক্রবার সরাসরি শুভেন্দুর নাম মুখে না এনে তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন একটি নির্দিষ্ট মানুষের অনুমতি ছাড়া তাঁরও পুর্ব মেদিনীপুরে ঢােকার অনুমতি ছিল না বলে দাবি করেছেন। এই নির্দিষ্ট মানুষটি যে শুভেন্দুই, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা।

পূর্ব মেদিনীপুরের তিনটি সভা করেন মমতা পটাশপুরের সভাতেই অভিযােগ কার মমতা বলেন ‘আগেও একাধিক বার পটাশপুরে এসেছি আমি কিন্তু সেই সময় মেদিনীপুর জেলায় শাসন ছিল একটি নির্দিষ্ট মানুষের হাতে, যেখানে অন্য কেউ পাত্তা পেত না এবং আমাকেও আসতে দেওয়া হত। কিন্তু আজ আমি স্বাধীন।

আজকের দিনে মেদিনীপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের যে কোনও জায়গায় যেতে পারি। আগে আসার আগে অনুমতি নিতে হত। জিজ্ঞেস করতে হত, এগরায় যাব পটাশপুরে যাব? ভগবানপুরে যাব? তমলুকে যাব হলদিয়ায় যাব? ‘


অমিত শায়ে হাতে গলায় পদ্মের উত্তরীয় পরার সময়ই শুভেন্দু জানিয়েছিলেন ২০১৪ সাল থেকে বিজেপি-র সঙ্গে যােগাযােগ ছিল তাঁর। তা নিয়ে এত দিন জনসমক্ষে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি তৃণমূল নেত্রীকে।

কিন্তু পটাশপুরের সভায় খানিকটা স্বগতােক্তির সুরেই মমতাকে বলতে শােনা যায় যে, ঘরশত্রু বিভীষণ’- এর অভিসন্ধি বুঝতে পারেননি তিনি। মমতা বলেন ‘এত অন্ধ স্নেহ দিয়েছিলাম তাদের। কিন্তু পরিবর্তে তারা গদ্দারি করল। গদ্দার যারা ছিল, তারা গদ্দারি করবেই। তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

কিন্তু এটা ভাবতে পারিনি যে ২০১৪ সাল থেকে বিজেপির সঙ্গে যােগাযােগ রাখছিল তারা। আজকে সে কথা স্বীকার করছে। অর্থাৎ ঘর শত্রু বিভীষণ ছিল। আমি বুঝতে পারিনি। তাই এত কষ্ট হয়েছিল আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি।

অন্যদিকে মমতার মন্তব্যে এখনও কোনও প্রতিত্রিয়া মেলেনি শুভেন্দু বা অধিকারী পরিবারের তরফে। শিশির অধিকারী জানিয়েছেন, শুভেন্দুর কথা মেনেই তিনি অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মােদির সভায় যাবেন। বিজেপি ভয় পাচ্ছে। ওরা বুঝতে পেরেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় জয়ী হলেই দিল্লি চলে আসবে। তাই এখানেই ফেঁস কর।

ঘরে ঘরে কেউটে ঢুকিয়ে দাও, কলাইকুণ্ডায় খড়গপুর বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী দীনেন রায়ের সমর্থনে ঝাপিয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যােগী আদিত্যনাথ সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একঝাক মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। বাংলা দখলে বিজেপির এই সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়াকে কটাক্ষ করেই মমতার এই মন্তব্য।

তিনি পরিষ্কার বলেন, সিপিএমের হার্মাদরা বিজেপি হয়েছে। তৃণমুলের কয়েকজন গাদ্দার বিজেপির হার্মাদ হয়েছে। সুশান্ত ঘােষ, তপন ঘােষের মতাে সিপিএমের লােকজন বিজেপির হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। এরা বিজেপির বিরুদ্ধে বললেও আদপে বিজেপিকে সাহায্য করছে।

বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে মমতা বলেন, বিজেপি স্বৈরাচারী, দুরাচারী। এরা খালি গিলতে এসেছে। পদ্মের পাপড়িতে দুর্নীতির ছাপ। একটা প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি। ক্ষমতায় ফিরলে কী করবেন সেকথাও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।

তিনি বলেন, ছাত্রদের ৪ টাকা সুদে ১০ লক্ষ টাকায় ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। তারা চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার যাই হতে যাক না কেন নিজেদের পড়াশােনার খরচ নিজেরাই খরচ করবে তার জন্য বাবা-মায়ের উপর নির্ভর করতে হবে না মমতার দ্বিতীয় ঘােষণা, মেয়েদের হাত খরচের জন্য টাকা তেকে বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা করে দেবে।

আমজনতার সেন্টিমেন্ট উসকে দিতে বারে বারেই ভাঙা পায়ের প্রসঙ্গ টেনে নিজের উপর অত্যাচারের কথা তুলে এনেছেন মমতা। তিনি বলেন, আমার উপর এটা একমাত্র আঘাত নয়। হাজরা মােড়ে লাঠির আঘাত দেওয়া হয়েছিল। ৪৬ টি সেলাই পড়েছিল। কোমরেও মার আছে। তাই এখনও বেল্ট পুরতে হয়। পা জখম আছে বলে যতটা খাটার ততটা পারছি না। অন্যের উপর ভর দিয়ে আমাকে চলাফেরা করতে হচ্ছে।

মমতার বক্তব্য বিতর্কও উস্কে দিয়েছে। ক্লাব ও পুজো কমিটি গুলির উদ্দেশে মমতা বলেন, আপনাদের ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কোনও সমস্যা থাকলে দেখে দেব। কিন্তু বিজেপির টাকার কাছে মাথা বিক্রি করে দেবেন না। ওই টাকা জনগণের আপনাদের করের টাকা চুরি করে আপনাদের দিচ্ছে।

আজকের সভায় মানুষের উপস্থিতি স্বস্তি দিয়েছে। খড়গপুরের তৃণমূল প্রার্থী দীনেন রায়কে। দলের সঙ্গে লড়াই করে খড়গপুরেই থেকে গিয়েছেন তিনি। তার সিদ্ধান্ত যে ভুল হিল না আজকের সভায়মানুষের উপস্থিতি দীনেনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় সিলমােহর বসিয়েছে।

লােকসভা নির্বাচনে খড়গপুর ১ নং ব্লকের সাতটি অঞ্চলে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। দীনেন আত্মবিশ্বাসী মুখ্যমন্ত্রী তাকে এই ব্লকে এগিয়ে যাবার পথে যথার্থ ওষুধ দিয়ে গেলেন।