বিজেপির কালীঘাটে মিছিল প্রসঙ্গে কটাক্ষ মমতার ‘পচা কুকুর বাড়ির সামনে ফেলে আসব’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়. (Photo: SNS)

বৃহস্পতিবার মগরাহাট পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মনস সাহার মৃতদেহ নিয়ে কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির অদুরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বিজেপি। ভােট পরবর্তী হিংসায় তৃণমূলের মারেই মানস সাহার মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযােগ তুলে সুকান্ত মজুমদার, অর্জুন সিং, প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালরা দেহ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন

সেই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার ভােট প্রচারে গিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা ভবানীপুরের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রী এদিন দাবি করেন, ভােট পরবর্তী হিংসায় মৃত্যু হয়নি। তিনি বলেন, একটি ছেলে মারা গিয়েছে। নির্বাচনের সময় একটা ঘটনা ঘটেছিল। পরে ভালাে হয়ে গিয়েছিল।

শুনেছি, পরে সার্জারি হয়েছিল। তাতেই মারা যায়। কিন্তু সেই মৃত্যুকে এইভাবে চালানাে হচ্ছে। বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে মমতা এদিন বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডেড বড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে। কত বড় ক্ষমতা। আমি যদি তােমার বাড়ির সামনে একটা কুকুরের ডেডবড়ি পাঠিয়ে দিই? মেশিনারি আমার নেই? বদমায়েসি করলে কী না করা যায়।


পচা কুকুর তােমার বাড়ির সামনে রেখে আসব। গন্ধে দশদিন খেতে পাবে না তুমি। শুক্রবার বলবন্ত সিং ধাবার সামনে তৃণমূল নেত্রীর সভা শেষ হওয়ার আগেই ‘পচা কুকুর’ মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক জমে যায়।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, মানস সাহা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। তার মৃতদেহের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কুকুরের ডেডবডির তুলনা করছেন। এর থেকে নিম্ন রুচির আর কিছু হতে পারে না। ভাবতেও অবাক লাগে, সেরকম একজন মহিলা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এদিন একথাও বলেছেন, যে কোনও মৃতুই খুব দুঃখজনক।

কিন্তু তাঁর পচা কুকুর মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক শালীনতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বিশেষ করে ভবানীপুর উপনির্বাচনের আগে মমতার এই ধরনের মন্তব্য জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। উক্ত সভায় মমতা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

বলেন, অসমে কী করছে? কত লােককে এনআরসি’র নামে খুন করছে। ফায়ারিং করে খুন করে ডেডবডির ওপর নাচছে। দিল্লিতে কোর্টে তিনজন মারা গিয়েছে গুলিতে। ইউপি, বিহারে কোনও আইন আছে? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কোনও আইন নেই। আর বাংলার মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে?

ভােট পরবর্তী হিংসার অভিযােগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, নিজের বাড়িতে বােমা মারছে আর টেলিভিশনে বলছে আমাদের মেরেছে। মমতা সাফাই দিয়ে বলেন, কে মারবে, তার গায়ে ছুঁতেই লজ্জা লাগে। তৃণমূল গুণ্ডাদের দল নয়।

পুরনাে প্রসঙ্গ তুলে মমতা এদিন বলেন, আগে সিপিএম আমলে ভােট দিতে গেলে বােমা নিয়ে তাড়া করত। কলকাতার মানুষ সাক্ষী। মমতা এদিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, তিরিশ বছর সিপিএমের সঙ্গে লড়তে পারলে তােমাদের সঙ্গেও পাব। আমরা লড়াই করি। এজেন্সির ভয় পাই না। জেলে যাব। তবুও আত্মসমর্পণ করব না।

শুক্রবার ভবানীপুর উপনির্বাচনের প্রচারে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে একহাত নিলেন তৃণমূল নেত্রী । প্রশ্ন তুললেন প্রধানমন্ত্রীর পিএম কেয়ার্সের টাকা নিয়েও । কেন্দ্রকে নিশানা করে মমতা বললেন , সিপিএম বহু বছর রাজনীতি করেছে বাংলায় কত অন্যায় করেছে। একটাও সিবিআই, ইডি’র কেস হয়েছে বাংলায়? ওরা চিদম্বরমের গায়েও হাত দিয়েছে।

কিন্তু আসল লােকের গায়ে হাত দেয়নি। আর বাংলায় যে দলটা সৎ, নির্ভীক, সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে, সেই পার্টির সবাইকে টেনেছে। নােটবন্দি থেকে পিএম কেয়ারসের টাকা কোথায় গেল, বলে প্রশ্ন তুলেছেন। এরপরই নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ এদিন ফের টেনে আনেন মমতা।

তাঁর কথায়, আমি ঝুঁকি নিয়ে নন্দীগ্রামে গিয়েছিলাম। কিন্তু এজেন্সি দিয়ে ষড়যন্ত্র করবে ভাবতেই পারিনি। বিজেপির পরিকল্পনা ছিল মমতাকে হারাতে হবে। ও মাথা নত করে না। তাই সর্বশক্তি দিয়ে হারাও। তাকে প্রাণে মেরে দেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল বলে অভিযােগ করেন তৃণমূল নেত্রী।