উন্নয়নের প্রশ্নে মোদিকে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

শনিবার দমদমে দলীয় প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভা থেকে উন্নয়ন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে কটাক্ষ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গুজরাতের মতাে ১৭টা বন্দর থাকলে বাংলায় ডায়মন্ড বানাতাম।

এদিকে শুধু উন্নয়ন প্রসঙ্গে নয়, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও নরেন্দ্র মােদির সমালােচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বাম আমলে তাঁর উপরে হওয়া অত্যাচারের কাহিনী তুলে আনেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন বিকেলে দমদমের সেন্ট্রাল জেল ময়দান থেকে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রায় এক ঘন্টা ধরে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই লম্বা বক্তৃতার কারণও এদিন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ব্যক্ত করে বলেন, দমদমের প্রতি তাঁর আলাদা আবেগ আছে তাই এত লম্বা বক্তৃতা তিনি দিলেন।


এদিন বক্তব্যের শুরুতে মহিলা সমর্থকদের বসতে অসুবিধে হচ্ছে দেখে তিনি নিজেই নিরাপত্তারক্ষীদের ডেকে মহিলাদের সামনে নিয়ে আসেন। এরপর বক্তব্য শুরু করতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে তাঁর মতাে মার আর কেউ খায়নি। এপ্রসঙ্গে তিনি সিপিএম আমলে তাঁর ওপর হওয়া অত্যাচারের নানা কাহিনী তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।

এরপরেই বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘যেভাবে গরু হারিয়ে গেলে কোনও কৃষকের প্রায় মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার দশা হয়, তেমনই হেরে যাওয়ার ভয়ে নরেন্দ্র মােদি এবং অমিত শাহের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে’।

এদিন তাঁর ওপরে বিজেপির তােলাবাজির অভিযোগের জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপির লােকেরা তাঁকে তােলাবাজ বলনে। তিনি ৯০ সাল থেকে কোন মাইনে নেন না। ছবি বেচে যে টাকা পন তাও মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দিই। আর মােদিবাবু ১০ কোটি টাকায় নিজের কোট নিলাম করছেন, আমাকে প্রশ্ন করার মােদি কে?

প্রসঙ্গত, এদিন এই জনসভায় প্রার্থী সৌগত রায় সহ উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পূর্ণেন্দু বসু, ব্রাত্য বসু, সুজিত বসু, তাপস রায়, বিধায়ক নির্মল ঘােষ, পার্থ ভৌমিক, স্থানীয় তিন পুরসভার পুরপ্রধান ও কাউন্সিলররা।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রায় বছর তিনেক আগে দমদমের জেশপ কারখানা রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে নিলেও কেন্দ্রের তরফে বিলে স্বাক্ষর না করায় সেই অধিগ্রহণ আটকে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ১৫ কোটি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল পেয়েছিল জেশপ। একইভাবে ডানলপ কারখানা এবং পশ্চিমবাংলার বদলে বাংলা নাম করার ক্ষেত্রেও বিল স্বাক্ষর করেনি কেন্দ্র।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী অভিযােগের সুরে বলেন, জাতীয় টিভি চানেলগুলিতে তাঁর নামে কটূক্তি করছেন মােদি। আমার চরিত্র হৃান করে , কতগুলি ন্যাশনাল চ্যানেলকে দিয়ে ঘোটি করে বলা হচ্ছে আমি নাকি হিন্দুকে দেখি না। আমি নাকি শুধু মুসলিমদের দেখি। আমি কি করে বােঝাই, আমি নিজেই হিন্দু। আমি হিন্দু-মুসলমান করি না। আমি মানুষ করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতায় জাতীয় সঙ্গীতে ভারতের বৈচিত্রের কথা বলে গেছেন। আমি কাকে অনুসরণ করব রবীন্দ্রনাথ না নরেন্দ্র মােদিকে।

এরপরেই তিনি বলেন, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অমর্ত্য সেনকে সরিয়ে দিয়েছেন। এমনকী বেলুড় মঠ থেকেও স্বামীজিদের সরিয়ে দিয়ে আরএসএস’এর লােকদের বসিয়েছে মােদি। কোনও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে নিজের বিরুদ্ধে খবর সম্প্রচারে কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন মােদি।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তাই ভাইঝিকেও ভয় দেখানাে হয় । দমদমের পাশে দার্জির নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মােদির সমালােচনা করে বলেন, নরেন্দ্র মােদির জন্ম দাঙ্গার জন্য। অটলজি বেঁচে থাকলে নরেন্দ্র মােদির মুখ দেখতেন না। আগে রাজনাথ সিং রাজার মতাে থাকত। এখন মোদির মাউথ স্পিনার। মােদির সভায় মোদি মােদি আওয়াজ রেকর্ড করা থাকে। ওগুলাে যন্ত্রের কারসাজি। একটা রামমন্দির করতে পরে না খালি রাম রাম করে যাচ্ছে জগাই মাধাই। তিনি আরও বলেন, আরবিআই থেকে সিবিআই আর ইডি থেকে আইডি সব শেষ করে দিয়েছে। লুটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। দুই ভাই জগাই মধাইয়ের চেহারা দেখেছেন। আমাকে সবসময় চমকায় ধমকায়। এদের চেহারা দেখলেই ভয়ে মানুষ শুকিয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, রবিবার, শনিবার কবে চলে যায়, সব ভুলে যাই। ন্যাশনাল নিউজ, বাংলা নিয়ে কুৎসা করছে। আর বিজেপি ওই ছবি দেখে ইলেকশন কমিশনে দৌড়াচ্ছে। এদিন ফের একবার সাত দফা ইলেকশন নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইচ্ছে করেই রাজ্যে সাত দফার ভােট হচ্ছে। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়নে মানুষজন। ইচ্ছে করেই গরমে ভােট হচ্ছে। পাটি অফিস ঠিক করেছে দিন। এত গরমে বলতে বলতে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এরজন্য বিজেপি দায়ী। এদিন তিনি আরও বলেন, বিজেপির সম্বন্ধে বলতে গেলে কোরান, পুরাণ, বেদ-বেদান্ত সব শেষ হয়ে যাবে। শুধু ট্যাক্স কাটে। ইনকাম ট্যাক্সই উঠিয়ে রাজ্য সরকার নিজের ট্যাক্স নিজে দেবে ।