খড়গপুরে বৈঠকে মমতা-চন্দ্রবাবু

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও এন চন্দ্রবাবু নাইডু, (Photo: Indrajit Roy/IANS)

ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের আগেই দিল্লিতে নতুন সরকার গঠনের অঙ্ক জোরকদমে শুরু হয়ে গেল। আর সেই অঙ্ক কষার প্রথম ধাপের সাক্ষী থাকল খড়গপুরের তালবাগিচা হাইস্কুলের মাঠ।

আক্ষরিক অর্থে তালবাগিচার এই সভা ছিল মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী ডা. মানস ভুঁইয়ার সমর্থনে। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর উপস্থিতিতে সেই সভার আকর্ষণই হয়ে দাড়াল হাই-ভােল্টেজ।

মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য চলাকালীন মঞ্চে চন্দ্রবাবু নাইডুর প্রবেশ। মমতা বক্তব্য শেষ করে ডেকে নিলেন নাইডুকে। নাইডুর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরে দুই মুখমন্ত্রী মঞ্চ থেকে নেমে মঞ্চের নিচে অস্থায়ী রুমে ঢুকলেন। তারপর দশ মিনিট ওয়ান ইজ টু ওয়ান কথা হল।


রাজনৈতিক মহল মনে করছে গতকাল দিল্লিতে রাহুল গান্ধির সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন চন্দ্রবাবু। রাহুলের বার্তাই তিনি মমতা ব্যানার্জিকে দিয়েছেন। মমতা এবং চন্দ্রবাবু দুজনেই তাঁদের বক্তব্য পরিষ্কার জানান, ২৩ মে ফলাফল প্রকাশ হলেই দেখা যাবে  এবারের নির্বাচনে একক ক্ষমতায় এনডিএ আসতে পারবে না। সেইক্ষেত্রে বাংলার বাঘিনী মমতা ব্যানার্জির হাতেই যে কেন্দ্রীয় সরকারের চাবিকাঠি থাকবে তা পরিষ্কার জানান চন্দ্রবাবু।

মমতা ব্যানার্জি পরিষ্কার বলেন, ‘ওরা জিতবে না। কিন্তু অন্যদিনের তুলনায় মােদি নিয়ে মমতার সুর ছিল অনেক নরম। তিনি বলেন, বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাবনের মতাে অঙ্গভঙ্গি করছেন। এতে মানুষ তাে ভয় পাবে? ঔদ্ধতাকে মানুষ ভয় পায় না। মমতা বলেন, কথাবার্তা বুঝে বলবেন। হোমওয়ার্ক করে কথা বলুন। প্রধানমন্ত্রীর মুখে মিথ্যা কথা শোভা পায় না। মমতা আরও বলেন, বিজেপি’কে গণতন্ত্রে কবর দিন। আজ নােট বাতিল করছে। কাল ব্যাঙ্ক বাতিল করে দেবে, সংবিধান বাতিল করে দেবে।’

কেন্দ্ৰে নতুন সরকার নিয়ে চিন্তাভাবনা যে দিল্লির অলিন্দে শুরু হয়ে গিয়েছে তা উঠে আসে চন্দ্রবাবুর গলাতেও। নাইডু বলেন, মােদি বিরােধী নেতাদের আক্রমণ করছেন। তার অস্ত্র সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স। কিন্তু মােদি একটা হেরে যাওয়া লড়াই লড়ছেন। মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্নে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী আসবেন। মমতাদি যত বেশি আসনে জিতবেন, দিলির লড়াইয়ে তাঁর লড়াই তত বেশি তীব্র করবে। মমতাদি হচ্ছেন বাংলার বাঘিনী যিনি ভারতবর্ষের বাঘিনী হয়ে মােদিকে শায়েস্তা করবেন। মােদি যে চাপে সেকথার উল্লেখ করে, নাইডু বলেন, ইতিমধ্যেই মোদি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ককে নিয়ে তাঁর অবস্থান বদল করেছেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন, এককভাবে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়।

নাইডু বলেন, মােদি গুজরাত থেকে দিল্লি এসেছিলেন সারা দেশে গুজরাত মডেল চালু করবেন বলে। এই মডেলে গরিবের স্থান নেই। সেই তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের মডেল অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য, কারণ এই মডেল গরিবের কথা বলে। তাদের উন্নয়নের কথা বলে। দেশের সার্বভৌমত্ব। সংবিধান ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।

এদিন খড়গপুরের বিজেপি বিধায়ক তথা মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘােষকেও তীব্র আক্রমণ চালান মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, একটা কাজ বলুন, যেটা গত তিন বছরে বিধায়ক করেছেন। অনেক বড় বড় কথা বলছেন। তার একটাই কাজ, গদা নিয়ে ঘুরে বেড়ানাে। উনি গদাবাবু, গদাদাদা। মমতা বলেন, দিলীপ ঘোষ জিতবে না। একজন বিধায়ক যে ভদ্র ভাষায় কথা বলতে পারে না।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে দিলীপবাবু বলেন, উনি আসলে গদাকে ভয় পান। ওর ভাইয়েরা ওকে ঠিকমত খবর দেয় না। ভাইয়েরা ঠিক খবর দিলে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন। আমি বিধায়ক থাকার সময়েই খরিদা ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়েছে। পাসপাের্ট অফিস হয়েছে। রেলের রাস্তা চওড়া হয়েছে, চকচকে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তালবাগিচার সভায় কোন রাস্তা দিয়ে এসেছেন জানি না, খড়গপুর রেল এলাকা দিয়ে রেল অবশ্যই এইসব দেখতে পেতেন। আজকের সভায় ছিলেন রবিশংকর পাণ্ডে, দেবাশিস চৌধুরী, নির্মল ঘােষ, অপূর্ব ঘােষ, অজিত মাইতি, রমাপ্রসাদ গিরি প্রমুখ।