এসআইআর, সম্প্রীতি ও ‘বাংলাবিদ্বেষ’— মুর্শিদাবাদে একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রকে কড়া আক্রমণ মমতার

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রাজ্যে এসআইআর চলাকালীন তৃণমূলের ভোটাধিকার রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শুক্রবার মুর্শিদাবাদের সভা থেকে কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই সভা থেকেই ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত অশান্তি নিয়ে মুর্শিদাবাদের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যবাসীকে স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি বলেন, মুর্শিবাবাদের মানুষ অশান্তি মানেন না। কার্যত বহরমপুরের জনসভা থেকে এই বার্তাই প্রথমে শোনালেন মমতা। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, সংখ্যাগুরুরাই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেবেন, এটাই সভ্যতার নিয়ম।

প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে জঙ্গিপুরে ওয়াকফ ইস্যুতে হওয়া অশান্তির প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সেই সময় তিনি মন্ত্রী জাকির হোসেন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সরাসরি বলেছিলেন, ‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা দিন, হিন্দুরাও যাতে কোনও নির্যাতনের শিকার না হন, সেই দায়িত্বও নিন।’
এদিন নাম না করে বিজেপিকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যাঁরা সাম্প্রদায়িকতার রক্তে হোলি খেলছে, তাঁদের সতর্ক করছি। বাংলা সম্প্রীতির বাংলা। এখানে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি চলবে না।’

রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতেই মুখ্যমন্ত্রী তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁর দাবি, যে সব রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় নেই, সেখানেই পরিকল্পিতভাবে ভোটের আগে এসআইআর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অসম ও ত্রিপুরা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী হওয়া সত্ত্বেও সেখানে এসআইআর না-হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বিজেপির রাজনৈতিক স্বার্থকেই নিশানা করেন।


মমতা বিজেপিকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘ভিন্‌রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই মানুষকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অন্যায় হচ্ছে। বিজেপি বাংলা বিদ্বেষী।’

এই সভা থেকেই রাজ্যের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সোজাসাপটা জানিয়ে দেন, বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প হতে দেবেন না। তাঁর কথায়, ‘আমার গলা কেটে দিলেও বাংলায় এনআরসি হবে না। যাঁরা এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি হিন্দু। যে গাছের ডালে বসেছ, সেই ডাল কাটবে না— এটাই বলছি বিজেপিকে।’

মমতার আরও দাবি, শুরুতে তাঁরা এসআইআর হতে দেননি। কিন্তু যদি এসআইআর প্রক্রিয়া চালু করতে তিনি বাধা দিতেন, তাহলে বিজেপি রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করত বলে দাবি করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অমিত শাহের চালাকি আমরা ধরে ফেলেছি। আমরা করব, লড়ব, জিতব। আমাদের ভাতে মারা যাবে না, সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া যাবে না।’

সম্প্রতি রাজ্যসভায় ‘বন্দে মাতরম’ বা ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান নিষিদ্ধ হওয়া নিয়েও ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে বহরমপুরের সভা থেকে মমতা বলেন, ‘বন্দে মাতরম বাংলার গর্ব। জাতীয় স্তোত্র এই বাংলার মাটির উপহার।’ তিনি মনে করিয়ে দেন, স্বাধীনতার লড়াইয়ে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে শুরু করে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ সহ বাংলার আত্মা সর্বদা দেশপ্রেমে উজ্জ্বল। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র বাংলার পরিচয় ভেঙে দিতে চাইছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা সাম্প্রদায়িকতার রক্তের হোলি খেলছে, তাঁদের বলি— বাংলা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মানবে না।’

এই সভায় মুখ্যমন্ত্রী এসআইআর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এটাও জানান, তিনি এখনও নিজের এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করেননি। কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘যতক্ষণ না প্রতিটি মানুষের নাম তুলছে, ততক্ষণ নিজের নাম তুলব না।’ তিনি স্পষ্ট করে দেন, তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে ফর্ম পৌঁছনোর যে খবর ছড়ানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ‘মিথ্যাচার’। তিনি বলেন, ‘আমি কথা দিলে কথা রাখি।’

এসআইআর আবহে এলাকায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও এদিন দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মানুষকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘এসআইআর নিয়ে ভয় পাবেন না। নথিগুলি জমা দিন।’