পুর চেয়ারম্যান বাছাই নিয়ে সোম-সন্ধ্যায় পিকের সঙ্গে বৈঠকে মমতা-অভিষেক

পিকের সঙ্গে বৈঠকে মমতা-অভিষেক (Photo: SNS)

শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্টডাউন। ফুরসত নেই ফেলারও। কারণ কোনও কাজই ফেলে রাখতে নারাজ তৃণমুল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেননা, আগের থেকে কলেবরে বেড়ে চলেছে দল।

আর পুরনির্বাচনের আগে প্রার্থী তালিকা নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছিল জনমানসে, চেয়ারম্যান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যাতে তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাইছেন রাজ্যের শাসকদলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।

রাজ্যের ১০৬ পুরসভার মধ্যে একটি গিয়েছে বামেদের দখলে আর পাহাড়ে উত্থান হয়েছে নতুন দল, ‘হামরো পার্টি’র।


ফলে মাত্র ২টি পুরসভা ছাড়া বাকি ১০৬টি পুরসভার মধ্যে ৩টি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে। এই ত্রিশঙ্কু পুরসভাগুলিতেও লক্ষ্য রেখে রণকৌশল গ্রহণ করেছে তৃণমূল।

সোমবারের রুদ্ধার বৈঠকের পর মঙ্গলবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে নজরুল মঞ্চে ফের একসঙ্গে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশান্ত কিশোর এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রসঙ্গত, সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাসভবন সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন।

এই তিনজন সেই বৈঠকে রাজ্যের ১০৬ টি পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভাইসচেয়ারম্যান কারা হবেন মূলত তা নিয়েই আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে চেয়ারম্যান ও ভাইসচেয়ারম্যান পদে দলের পছন্দ নিয়ে বিষদে আলোচনা হয়।

আগামীতে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এই নিয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যতদূর জানা যাচ্ছে খুব দ্রুত রাজ্যের ১০৬টি পুরসভার চেয়ারম্যান-ভাইসচেয়াম্যান কারা হবেন তা জানিয়ে দেওয়া হবে রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে।

ইতিমধ্যে মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চের সভা থেকে দলনেত্রী বার্তা দিয়েছেন, যে কোনও কাউন্সিলরই চেয়ারম্যান হতে পারেন। তবে যিনি চেয়ারম্যান হবেন তাঁকে যেমন সবাইকে নিয়ে চলতে হবে, ঠিক একইভাবে অনা কাউন্সিলরদেরকেও চেয়ারম্যানকে সাহায্য করতে হবে।

এটাই দলের নির্দেশ। ফলে যতদূর জানা যাচ্ছে, এবার বেশ কিছু নতুন মুখের দেখা মিলতে পারে পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান হিসেবে। পুরনোদের পাশাপাশি তরুণদেরও পুরসভা চালানোর ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষপাতী দলের নেতৃত্ব।

তবে সংগঠনে পুরনোদের গুরুত্ব আরও বাড়াতে চলেছেন দলনেত্রী। দলের অন্দরে পুরসভার চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান বাছাইয়ের প্রক্রিয়া জোর কদমে চলছে। প্রাথমিক তালিকাও প্রস্তুত।

দলের অনুমোদনের পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রিমোর সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরই প্রকাশ্যে আসবে আগামীতে কাদের হাতে থাকছে পুরসভাগুলির দায়িত্ব। ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশীরা তদ্বির করা শুরু করে দিয়েছেন।

উত্তরবঙ্গ থেকে যারা পুর চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রত্যাশী তাদের অনেকেই ট্রেন ধরে ভোটের ফল গণনার পরদিনই ভোরবেলা কলকাতা পৌঁছে গিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।

পুরভোটের প্রথম পার্থী তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের প্রথম প্রার্থী তালিকা মুছে দিতেও বেশ কয়েকটা দিন সময় চলে গিয়েছিল।

তারপরই প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। যদিও এর মাঝে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর এক বেসরকারী টেলিভিশন সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জানান, মমতাদির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আগের মতোই আছে। কোনও ভুল বোঝাবুঝির প্রশ্ন নেই।

এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম এইধরনের খবর রটাচ্ছে। যেদিন প্রশান্ত কিশোর এই কথা বলেন তার একদিন আগে তিনি নীতিশ কুমারের সঙ্গে নৈশভোজ সেরেছিলেন। গুঞ্জন ওঠে, নীতিশের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করতে চায় বিরোধীরা।

আইপ্যাকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও নানা গুঞ্জন তৈরী হয় তৃণমূলে। এমনটাও শোনা যায় মেসেজও চালাচালি হয়েছিল প্রশান্ত কিশোরে সঙ্গে তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে।

তবে মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চের সভায় প্রশান্ত কিশোরকে প্রকাশ্যে দেখা গেলেও তার আগের দিন সোমবার কিন্তু আড়াই ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে কালীঘাটে। সেখানে পুরসভা ধরে ধরে সম্ভাব্য পুর চেয়ারম্যান ও ভাইসচেয়ারম্যানদের নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে যে তালিকা প্রস্তুত হয়েছে, সেটাই চূড়ান্ত তা বলার সময় এখনও আসেনি। এখনও বেশ কিছু বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, আগামী দিনে যাদের কাঁধে এই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হবে সেই ১০৬টি পুরসভায় তারাই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানদের একটা বড়সড় ভূমিকা থাকে।

এবার অনেক আনকোরা মুখকেই আগামীর কথা ভেবে বড়সড় দায়িত্বে আনা হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। তবে যাই করা হোক না কেন যদি কোনও তরুণ মুখকে বড় দায়িত্বে আনা হয়, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার সংগঠনের রাশ থাকার সম্ভাবনা থাকছে কোনও অভিজ্ঞ নেতা নেত্রীর হাতে।

আর চেয়ারম্যান বা ভাইসচেয়ারম্যান পদে যদি অভিজ্ঞ কাউকে বসানো হয়, সেক্ষেত্রে সংগঠনকে গতিশীল রাখতে প্রাধান্য দেওয়া হবে তারুণ্যকে।

ফলে প্রবীণ ও নবীনের ভারসাম্যের এক মিশেলে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিল তৃণমূল। ৫টি জেলার সভাপতি পদে পরিবর্তন এনেছেন মমতা।

আগামীতে আরও বেশ কয়েকটি জেলার সংগঠনে ঝাঁকুনি দিতে রদবদলের কথা এদিন নিজেই জানিয়েছেন তৃণমুল সুপ্রিমো।

তবে পুরসভার চেয়ারম্যান-ভাইসচেয়ারম্যান কারা হবেন সেক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর টিমের যে ভূমিকা থাকবে এমনই খবর সামনে আসছে।