সামশেরগঞ্জে জমি দখলকে কেন্দ্র করে বােমাবাজি, গুলি, মৃত ১, আহত ২

জমি দখলকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় রণক্ষেত্র হয় মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানা এলাকা। ধুলিয়ান পুরসভা এলাকায় চলে বােমা-গুলির লড়াই।

Written by SNS Berhampore | November 5, 2020 3:06 pm

প্রতিকি ছবি (File Photo: iStock)

মাত্র আট শতক জমির দখলকে কেন্দ্র করে বুধবার দফায় দফায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানা এলাকা। ধুলিয়ান পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফুটল ময়দান সংলগ্ন এলাকায় চলে বােমা-গুলির লড়াই। ইটবৃষ্টি। জমি দখলকারীদের হাতে গুলিতে খুন হন আলি আনসারি ( ৫৬ ) নামে স্থানীয় এক বেসরকারি মাদ্রাসার করণিক।

দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে গুলি করে তাকে খুন করে। আহত হন তার আত্মীয় মহম্মদ সেলিম শেখ এবং মােসর হােসেন। তাদের গুরুতর জখম অবস্থায় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একজনের আঘাত গুরুতর। মূল অভিযুক্তদের সঙ্গে সামশেরগঞ্জ থানার ওসি’র শাস্তির দাবিতে এদিন সন্ধ্যায় থানার সামনে অনুগামীদের নিয়ে অবস্থানে বসেন সামশেরগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের আমিরুল ইসলাম। ওসি’র মদতেই জমি মাফিয়ারা প্রকাশ্যে পিস্তল ও বােমা নিয়ে দাপিয়েছে এবং বােমা ছুঁড়ে, গুলি করে একজনকে খুন করেছে বলে বিধায়কের দাবি। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযােগে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আট শতক ( প্রায় পাঁচ কাঠা ) জমি নিয়ে দীর্ঘ দু’দশক ধরে বিবাদ চলছে মৃত ইমরান আলি আনসারি, তাঁর দাদা জামালউদ্দিন শেখের সঙ্গে মুর্শেদ মােমিন এবং খুর্শেদ মােমিনের। বিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত রায় ঘােষণা করলেও, জমিটির উপরে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। বিতর্কিত এই জমিটি মুর্শেদ ও খুর্শেদ বিক্রি করে দেয়া জাকির শেখ নামে এক জমি মাফিয়াকে। জাকির এলাকায় ভকত নামেই বেশি পরিচিত।

জাকির আবার সম্প্রতি জমিটি বিক্রি করে বারিক শেখ, লিটন শেখদের। বারিক ও লিটন হচ্ছেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ আনারুল হক ওরফে বিপ্লবের ভাই। স্থানীয় মানুষের অভিযােগ, আজ সকালে প্রায় গাড়ি বােঝাই ইট, বালি, সিমেন্ট এবং প্রায় ১০০ জনকে সঙ্গে নিয়ে বিতর্কিত জমিটি ঘিরতে আসেন জাকির, বারিকরা। সঙ্গে ছিল সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার রতনপুর গ্রামের কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। জমি ঘিরতে বাধা দেন মৃত ইমরান আলি আনসারির পরিবারের সদস্যরা। এ নিয়ে শুরু হয় গণ্ডগােল। এলাকাকে সন্ত্রত করতে একাধিক বােমা ফাটায় দুষ্কৃতীরা।

মৃতের বাড়ির ছাদের উপরেও ছোঁরা হয় বােমা। পুরাে ঘটনাটি ছাদ থেকে সরাসরি ফেসবুকে লাইভ করতে থাকেন মৃতের ভাইপাে জুবাইল আনসারি। একসময় দুষ্কৃতীরা বাড়ির ভিতরে ঢুকে ঘরের মদ্যে থাকা ইমরান তালিকে গুলি করে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘােষণা করেন।

অভিযােগ, প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে দুষ্কৃতীরা এলাকায় তাণ্ডব চালালেও, ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকা থানা থেকে পুলিশ আসেনি। ঘটনার অনেক পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাায় পুলিশ মােতায়েন থেকে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়।

মৃতের আত্মীয় হােসেনারা বিবি, আহত মহম্মদ সেলিম আনসারি হাসপাতালের দাড়িয়ে বলেন, ‘কুড়ি বছর ধরে মামলা চলছে জমি নিয়ে। জমি নিয়ে মামলার রায় আমাদের পক্ষে গিয়েছে। তারপরেও গায়ের জোরে সেই জমি জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষের ভাইদের কাছে বিক্রি করে জমি মাফিয়া জাকির শেখ। আজ রতনপুর থেকে কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে জাকির, বারিকরা জোর করে জমিটি ঘেরার কাজ করছিল।

পুলিশকে একাধিকবার ফোনে বিষয়টি জানানাের পরেও একজন পুলিশকর্মীও ঘটনাস্থলে আসেনি। স্থানীয় মানুষ, আমাদের আত্মীয়রা বাঁধা দিতে গেলে তারা বােমা, পিতল নিয়ে চড়াও হয়। বাড়ির ভিতরে ঢুকে বােমা মারে। গুলি চালায়। ঘরে ঢুকে গুলি করে মারল কাকাকে। পুলিশ একটু সতর্ক হলে এই ঘটনা ঘটত না’।

পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থানা। পুলিশ মনে করলে এই ঘটনা এড়াতে পারত। কিন্তু ওসি অমিত ভকতের মদতে এই ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে জমি মাফিয়ারা এইভাবে জোর করে একের পর এক জমি দখল করেছে। এ নিয়ে গণ্ডগােলও চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

স্থানীয় থানার ওসি এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যদি ব্যবস্থা নিত, তাহলে এভাবে একজন নিরীহ মানুষকে খুন হতে হত না। মুল অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও শাস্তির পাশাপাশি সামশেরগঞ্জ থানার ওসি’রও শাস্তি চাই। এই দাবিতেই থানার সামনে মেীন অবস্থানে বসেছি আমরা।’

জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে দুই গােষ্ঠীর মধ্যে মারামারি হয়েছে। একজন মারা গিয়েছেন। তার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠান হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। ভিডিও দেখে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে পুলিশি তল্লাশি অভিযান চলছে। তাদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের ২-৩টি টিম কাজ করছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।