এক স্বতন্ত্র নাম কৌস্তভ রানা সরকার

সমর কুমার রায়
বাংলা সঙ্গীত জগতে বর্তমানে যে সকল প্রখ্যাত সুরকার তাদের সুরের মোহে শ্রোতাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছেন, কৌস্তভ রানা সরকার নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতম৷ বাংলার সঙ্গীতের স্বর্ণযুগের বিখ্যাত শিল্পী শ্রী সুধীন সরকারের জ্যেষ্ঠপুত্র কৌস্তভ রানা সাকার শৈশব থেকেই গান বাজনার সাথে যুক্ত৷ মূলতঃ বাবা সুধীন সরকারের উৎসাহে ও তালিমে রানার সঙ্গীত শিক্ষা শুরু৷ মা শ্রীমতি কল্যাণী সরকারও ছিলেন তার অন্যতম উৎসাহদাত্রী৷ ছোট থেকেই বাডি়তে বিখ্যাত শিল্পীদের আনাগোনা দেখে এসেছেন৷ পেয়েছেন মাতৃসমা আরতি মুখোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ ও পরামর্শ৷
শৈশব কেটেছে দমদম ক্যান্টনমেন্টে৷ রানা সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন শৈলেন দাস, আচার্য জয়ন্ত বোস, পন্ডিত সুধীর চক্রবর্তী, রাজীব চক্রবর্তীর মত প্রখ্যাত সঙ্গীত গুরুদের কাছ থেকে৷ একই সাথে বাবা সুধীন সরকার এবং আরতি মুখোপাধ্যায়ের প্রশিক্ষণ তাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে কন্ঠ শিল্পী হিসেবে৷ সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলা সিনেমা অভিষেক-এ, যেখানে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা ও নীতা সেনের সুরে কৌস্তভ একটি গান গেয়েছিলেন — দ্যাখো আমার শ্যামের মুখে বাঁশি৷
কন্ঠ সঙ্গীতের পাশাপাশি কৌস্তভ রানা কীবোর্ড প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন প্রতাপ রায়ের কাছে এবং ভি বালসারার কাছে শেখেন পিয়ানো৷ একেবারেই নিজের প্রচেষ্টায় গিটার বাজানোতেও হয় ওঠেন দক্ষ৷
এরই মাঝে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম পাশ করার পর চাকরি শুরু করেন এক বেসরকারি কোম্পানিতে ৷ কিন্ত্ত যার রক্তে বয়ে চলেছে সংগীতের ধারা, তিনি কেনো বাঁধা থাকবেন চাকুরীর শেকলে? তাই মাস দুয়েক চাকুরী করার পরেই কাজ ছেডে় দিয়ে পুরোপুরি সঙ্গীতকেই বেছে নেন৷
এরপর শুধুই সঙ্গীতের সাধনা ও সুর সৃষ্টিতে আত্মনিয়োগ করেন রানা৷ সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন স্বর্গত মান্না দের গাওয়া একটি মিউজিক অ্যালবাম ছড়ার দেশের খোঁজেতে৷ স্বাধীন সুরকার হিসেবে কাজ করেছেন কসমিক হারমোনি, সাগরিকা মিউজিকো ইনরেকো থেকে প্রকাশিত প্রচুর মিউজিক অ্যালবামে৷ তার সুরে গান গেয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য্য, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য, নচিকেতা চক্রবর্তী, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, অমিত কুমার ও আরো অনেকে৷
সিনেমাতেও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কৌস্তভ রানা দিয়ে চলেছে তার মুন্সিয়ানার পরিচয়৷ তার সুরারোপিত গান যেসব সিনেমায় রয়েছে সেগুলি হলো দি বেস্ট সেলার (হিন্দি), আনকাট জলছবি, আবার অরণ্যে দিনরাত্রি ইত্যাদি৷
২০১৩  সালে পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট-এ পণ্ডিত রমেশ নারায়নের সাথে একটানা ৩৬ ঘণ্টা হারমোনিয়াম সঙ্গত করে কৌস্তভ রানা এক অনন্য নজির স্থাপন করেন৷ এই কাজটির জন্য লিমকা বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম স্থান পায়৷ ২০১৬ সালে চেন্নাইয়ে অবস্থিত তেইশটি বাংলা সংগঠনের তরফ থেকে তাকে সম্মিলিতভাবে সলিল চৌধুরী আওয়ার্ড প্রদান করা হয় সঙ্গীতে তার অসামান্য অবদানের জন্য৷ ২০১৭ সালে দুবাইয়ে ইন্ডিয়ান কনসোলেট-এর পক্ষ থেকে উদীয়মান সুরকার হিসেবে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায়৷
২০১৯ সালে পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার তত্বাবধানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সুরের মেলবন্ধনের অনুষ্ঠানে কীবোর্ড বাজিয়ে সাড়া ফেলে দেন কৌস্তভ রানা৷ একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে এবং একই সাথে একজন দক্ষ কী বোর্ড প্লেয়ার হিসেবে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশে বহুবার অনুষ্ঠান করে এসেছে রানা৷ নিউ জার্সিতে বিশ্ব শান্তির বার্তা হিসেবে যে সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানেও রানার বাদন সবাইকে মুগ্ধ করে৷ এই মুহূর্তে কৌস্তভ রানা ব্যস্ত রয়েছেন শিল্পী পূর্বাশা ব্যানার্জীর সাথে জুটি বেঁধে বিশ্ব শান্তির উপর গান সম্মলিত কিছু করতে যেখানে এদের সাথে পাওয়া যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের৷ কৌস্তভ রানার মত শিল্পীদের অধ্যবসায় ও নীরব সাধনা ভারতীয় সঙ্গীতের জগতকে আরো সমৃদ্ধ করবে এটা পাঠককুল আশা করতেই পারেন৷