ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত বাংলার জন্য কেন্দ্রের কাছে বকেয়া ত্রাণ সহায়তা ফেরতের দাবি জানিয়ে সংসদে নতুন করে সরব হলেন মেদিনীপুরের তৃণমূল সাংসদ জুন মালিয়া। বৃহস্পতিবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে তিনি অভিযোগ করেন, ‘বুলবুল’, ‘আমফান’, ‘যশ’ থেকে শুরু করে ‘ডানা’— একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাজ্যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলেও কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত ৩৭ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রেখে দিয়েছে। তাঁর দাবি, ‘সংকটের সময়ে মানুষের পাশে থাকা উচিত। আর্থিক সাহায্য নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।’
জুন মালিয়া বলেন, ‘এই ঘূর্ণিঝড়গুলিতে রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা তছনছ হয়ে গিয়েছে। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে, কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে, রাজ্যের বহু পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এত বড় ক্ষতি মেটাতে কেন্দ্রের বকেয়া ৩৭ হাজার কোটি টাকা খুবই জরুরি বলে দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের আরজি সত্ত্বেও আজও একটি পয়সাও পায়নি আমরা।’ তাঁর কথায়, এই আর্থিক বঞ্চনার ফলে এখনও ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত বহু মানুষের খুবই সমস্যার মধ্যে দিন কাটছে। পুনর্গঠনের কাজও নানা বাধায় আটকে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিধ্বংসী ‘আমফান’-এর ধাক্কায় কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছিল যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে হেলিকপ্টারে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। তাঁর ওই সফরের পর কেন্দ্র প্রাথমিকভাবে ১ হাজার কোটির ত্রাণ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু নবান্নের দাবি ছিল, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তার বহু গুণ বেশি। সেই তুলনায় কেন্দ্রের সহযোগিতা ছিল সামান্য। তারপর থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের ত্রাণে কেন্দ্রের ‘উদাসীনতা’ নিয়ে কড়া আক্রমণ করেছে তৃণমূল শিবির।
রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্র একাধিক দাবি-দাওয়া খতিয়ে দেখার কথা বললেও বাস্তবে কোনও অতিরিক্ত আর্থিক সাহায্য মেলেনি। আর সেই ক্ষোভের সুরই বৃহস্পতিবার সংসদে আরও একবার শোনালেন জুন মালিয়া। তাঁর কথায়, ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয় কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়। মানুষের যন্ত্রণা নিয়ে রাজনীতির জায়গা নেই। রাজ্যের প্রাপ্য ফেরত দিন।’
রাজনৈতিক মহলে জুনের এই বক্তব্যকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক-মুহূর্তে কেন্দ্র–রাজ্য দ্বন্দ্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজ্যের দাবি, এখনও সম্পূর্ণ ভাবে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয়নি। আর তাই বকেয়া সহায়তা দ্রুত মেটানো জরুরি।