নতুন সাজে সেজে উঠছে জলদাপাড়ার হলং বনবাংলো

জলদাপাড়ার ঐতিহ্যবাহী হলং বনবাংলো নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। হেরিটেজ বাংলো পুনর্নির্মাণে রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হয়েছে সবুজ সংকেত। বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। তবে হলং বাংলো আর আগের মত কাঠের হবে না। আগুনের ঝুঁকি এড়াতে এবার কাঠ ও কংক্রিট দিয়ে তৈরি হবে বাংলো। আগের স্থাপত্যই বজায় রাখা হবে। আগের মতই তাতে ৮টি ঘর থাকবে। ছাউনি টিনের পুরনো ঢঙে দেওয়া হবে। সিঁড়ির নকশাতেও রাখা হবে একই ঐতিহ্য।

নতুন হলং বাংলো আগের মতো বাণিজ্যিক পর্যটনের জন্য পুরোপুলি খুলে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে বনদপ্তরের তরফে কিছু জানানো হয়নি। সোমবার এই কাজের জন্য টেন্ডার ডাকবে বনদপ্তর।এই বনবাংলোর নকশা ও যাবতীয় খুঁটিনাটি দিয়ে ডি পি আর তৈরি করেছে পূর্ত দপ্তর। গত জুন মাসে জমা দেওয়া পূর্ত দপ্তরের সেই ডি পি আরেই রাজ্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে। জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও পারভিন কাসোয়ান জানিয়েছেন, ‘ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেওয়া সাবেক বনবাংলোর রূপ নতুন নির্মাণে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে।‘

পর্যটন ব্যবসায়ীরা পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইস্টার্ন ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘বাংলোটি পুড়ে যাওয়ার পর থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিলাম। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ ছিল এই হেরিটেজ বাংলো।‘


২০২৪ সালের ১৮ জুন রাতে বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের হলং বনবাংলো।  তদন্তে জানা যায়, তিন তলায় ৩ নম্বর ঘরে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে গোটা বাংলো পুড়ে যায়। আগের নকশা মেনে বাংলো তৈরির দাবি উঠেছিল সেই সময়। বাংলো তৈরি করার ক্ষেত্রে বাধা হয়েছিল ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণী আইন। সংরক্ষিত জঙ্গলে কোনও বাণিজ্যিক নির্মাণ নিষিদ্ধ বলা হয়েছে এই আইনে।

রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জে ভি জানান, এই বাংলো পূনর্নির্মাণে কোনও বাধা নেই।  এটা কোনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। এখান থেকে যে টাকা আয় হয়, তা রাজ্য সরকারের কোষাগারে জমা পড়ে না। জাতীয় উদ্যানের উন্নয়ন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় সেই টাকা খরচ হয়। এই বাংলো তৈরি হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। তখনও বন্যপ্রাণী আইন পাশ হয়নি। তাই কোনও সমস্যা নেই। কাঠের এই বনবাংলো রাজ্য পর্যটনে ‘কোহিনূর’ নামে পরিচিত।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই বিভিন্ন মহলে খুশির হাওয়া বইছে। আলিপুরদুয়ার ডিস্ট্রিক ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মানব বক্সি বলেন, ‘আমাদের গর্ব ঐতিহাসিক হলং বন বাংলো। সেই বাংলো আবার তার পুরনো রূপেই ফিরে আসছে। আমরা চাই দ্রুত এই বন বাংলো পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হোক।‘