ফুটেজে দেখা যায়নি বলে এটা প্রমাণিত নয়, উনি টাকা নেননি : মির্জা

নারদা মামলায় ধৃত আইপিএস সৈয়দ হােসেন আলি মির্জা জানান, ‘ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি বলে এটা প্রমাণিত নয় যে, উনি (মুকুল রায়) টাকা নেননি’।

Written by SNS Kolkata | October 1, 2019 1:10 pm

বর্ধমানের প্রাক্তন পুলিশসুপার সৈয়দ মহম্মদ হােসেন মির্জা। (File Photo: IANS)

নারদা মামলায় ‘প্রথম’ গ্রেফতার আইপিএস সৈয়দ হােসেন আলি মির্জার বয়ানে তলব পাওয়ার পর থেকেই একদা তৃণমূলের চাণক্য তথা অধুনা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায় সংবাদমাধ্যমে বলে আসছেন, নারদার কোনও ফুটেজে তাঁকে টাকা নিতে দেখা যায়নি, ব্যবসায়িক কারণে ম্যাথু স্যামুয়েলকে তৎকালীন পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়েছিলাম। কেন-না জমিজায়গা কেনাকাটার ব্যাপারে পুলিশের সহযােগিতা দরকার। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নারদ মামলায় তাঁকে ফাঁসানাের অভিযােগও তােলেন মুকুলবাবু।

শনিবার সিবিআইয়ের নিজাম প্যালেস অফিসে মুখােমুখি জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেই সঙ্গে রবিবার মুকুলবাবুর ফ্ল্যাটে টাকা লেনদেনের পুনর্নির্মাণ করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা, তাও মির্জা-মুকুলের উপস্থিতিতে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন একদা মুকুল রায়ের খাস লােক সৈয়দ হােসেন আলি মির্জা।

সােমবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে সিবিআই এজলাসে পেশ করার সময় নারদা মামলায় ধৃত আইপিএস সৈয়দ হােসেন আলি মির্জা জানান, ‘ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি বলে এটা প্রমাণিত নয় যে, উনি (মুকুল রায়) টাকা নেননি। সিবিআইকে বলে অনেক হালকা লাগছে’।

সােমবার দুপুরে ব্যাঙ্কশাল আদালতে সিবিআই এজলাসে পেশ করা হয় নারদ আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ধৃত আইপিএস সৈয়দ হােসেন আলি মির্জাকে। মির্জার আইনজীবী সায়ন দে জামিনের পক্ষে এজলাসে সওয়াল চালালেও সিবিআইয়ের আইনজীবী দীনেশ কুমার জামিনের কড়া বিরােধিতা করেন শুনানিতে। সিবিআই এজলাসের বিচারক অনুপম মুখােপাধ্যায় নারদা মামলায় তদন্তকারী সিবিআই অফিসার রঞ্জিত কুমারের কাছে কেস ডায়রি দেখে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুনরায় ১৫ অক্টোবর এই এজলাসে ধৃত আইপিএসকে পেশ করার আদেশনামা রয়েছে।

সােমবার সিবিআইয়ের তরফে ধৃত আইপিএস সৈয়দ হােসেন আলি মির্জাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে সিবিআই এজলাসে পেশ করা হয়। এদিনই সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ধৃত আইপিএসের। তাই একদা পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ হােসেন আলি মির্জার আইনজীবী সায়ন দে জামিনের পক্ষে সওয়াল চালান। তার যুক্তি, নারদা মামলায় আইপিএস মির্জা বরাবরই তদন্তে সহযােগিতা করছেন। কলকাতা হাইকোর্টের আদেশে এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশের পর থেকে ৯ বার জেরার সম্মুখীন হয়েছেন। একজন আইপিএস কখনওই পালিয়ে যাবেন না। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না মির্জা বর্তমানে প্রভাবশালী।

অপরদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবী দীনেশ কুমার জামিনের বিরােধিতা করে এজলাসে সওয়ালে জানান, ধৃত আইপিএস প্রভাবশালী, বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে যােগাযােগ রয়েছে। জামিন পেলে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে। তখনই আইপিএস মির্জার আইনজীবী পাল্টা জবাব দেন, মির্জা প্রভাবশালী নন, ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসে এক ঘটনায় রাজ্য সরকার তাঁকে সাসপেন্ড করেছে। ব্যাঙ্কশাল আদালতে সিবিআই এজলাসের বিচারক অনুপম মুখােপাধ্যায় তখন এই মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারের কাছে কেস ডাইরি তলব করেন। পরবর্তীতে তা দেখে বিচারক আইপিএস সৈয়দ হােসেন আলি মির্জার জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। প্রেসিডেন্সি জেলের হাসপাতালে কিংবা অরবিন্দ ওয়ার্ডে মির্জাকে রাখা হবে।

উল্লেখ্য, একসময় মালদার তৎকালীন জেলাশাসককে জেলের এই ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছিল। এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে সিবিআই এজলাসে শুনানির সময় ধৃত আইপিএসের আইনজীবী বারবার নারদ স্টিং অপারেশনের সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলের জেরার প্রসঙ্গ টানেন। আইনজীবী এজলাসে জানিয়েছেন, নারদা স্টিং অপারেশনটি কার নির্দেশে করা হয়েছিল, টাকার জোগান কীভাবে হয়, তা পুরােপুরি জানতে গেলে নারদা স্টিং অপারেনের সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলকে জেরার দরকার।

যদিও গত ২৪ জুন সিবিআই দফতরে ম্যাথু স্যামুয়েল এসেছিলেন। মির্জার গ্রেফতারির পর সিবিআই পুনরায় তলব করলে এখনও পর্যন্ত সিবিআইয়ের সামনে হাজির হননি ম্যাথু স্যামুয়েল। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে হওয়া নারদা স্টিং অপারেশনটি প্রকাশ্যে আসে গত বিধানসভা (২০১৬) নির্বাচনের আগে। এরপর ২০১৭ সালে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। বারাসত আদালতে ১৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। এই মামলায় ১২ নং অভিযুক্ত আইপিএস সৈয়দ হােসেন আলি মির্জাকে গত বৃহস্পতিবার সিবিআই অফিসে জেরা চলাকালীন গ্রেফতার দেখানাে হয়।  সেদিনই ব্যাঙ্কশাল আদালতে সিবিআই এজলাসে পেশ করা হলে ৫ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

গত শুক্রবার জরুরি ভিত্তিতে তলব করা হয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়কে। রাজনৈতিক ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে শুক্রবারের জেরা এড়াতে পারলেও শনিবার দুপুরে মুখােমুখি জেরার আয়ােজন ঘটে সিবিআইয়ের নিজাম প্যালেস অফিসে। এরপর রবিবার মুকুল রায়ের এলগিন রােডের ফ্ল্যাটে সিবিআই মির্জা ও মুকুল রায়ের ভিডিওগ্রাফি তদন্ত চালায়। মুকুল রায় গত বৃহস্পতিবারের মির্জা গ্রেফতারের পর থেকেই সংবাদমাধ্যমে বলতে শুরু করেন, নারদা তদন্তে তিনি পূর্ণ সহযােগিতা করবেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। নারদা স্টিং অপারেশনে কোনও ফুটেজেই তাঁকে টাকা নিতে দেখা যায়নি।

ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে সােমবার দুপুরে সিবিআই হেফাজত থেকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করার সময় পূর্ব বর্ধমানের একদা পুলিশ সুপার মির্জা জানান, নারদের ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি বলে এটা প্রমাণিত নয়, উনি টাকা নেননি। সিবিআইকে তদন্তে সহযােগিতা করে অনেক হালকা বােধ করছি। তিন বছরের ভিতরে থাকা নারদার জ্বালাযন্ত্রণার কথা সিবিআইকে জানিয়েছি। উল্লেখ্য, নারদা মামলায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা কালেকশন করে মুকুল রায়ের কাছে পৌঁছবার অভিযােগে অভিযুক্ত এই বরখাস্ত আইপিএস।