রাজীবের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে: মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (File Photo: IANS)

বিধানসভা ভােটের দিনক্ষণ ঘােষণার আর বেশি দেরি নেই। সাত-আটদিনের মধ্যেই ভােটের দিন ঘােষণা হবে বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যেই দলত্যাগীদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমাে। বুধবার আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে কর্মী সভায় যােগ দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, যারা ভােগী তারাই দলত্যাগ করে যাচ্ছেন। প্রকৃত তৃণমূল কর্মীরা কেউ ভাগী নন, তারা দল ছেড়ে যাবেন না। 

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যােগ দেওয়ার পরে এদিন মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রকাশ্যে অভিযােগের আঙুল তােলেন। উত্তরবঙ্গে গিয়ে স্থানীয় ইস্যু নিয়েই এদিন প্রাক্তন বনমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বন সহায়ক পদে নিয়ােগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করেছেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। আর সাত-আট দিনের মধ্যে নির্বাচনের দিন ঘােষণা হবে। তদন্ত চললেও এর মধ্যে কিছু করা যাবে না। 

মমতার আশ্বাস নির্বাচন মিটে গেলে প্রকৃত চাকরির দাবিদার কেউ বঞ্চিত হলে, তাদের দাবি পুনর্বিবেচনা করা হবে। অন্যদিকে মমতার এই আক্রমণের উত্তরে গুড়াপের সভা থেকেই অভিযােগের জবাব দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার জন্যই নিয়ােগের বিষয়টি তিনি বাের্ডের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। 


প্রসঙ্গত সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চলে বন সহায়ক পদে নিয়ােগ করা হয়েছে। নিয়ােগের বিজ্ঞপিতে বলা হয়েছিল, বনবক্তির বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই যাঁরা স্বেচ্ছায় বন-জঙ্গল রক্ষার কাজ করছেন, সুবিধে পাবেন তারাও। কিন্তু এই নিয়ােগ নিয়েই দুর্নীতির অভিযােগ উঠেছে। 

আলিপুরদুয়ারের চিলাপাতা রেঞ্জ, জলপাইগুড়ির খুনিয়া রেঞ্জ, ময়নাগুড়ির রামশাই রেঞ্জ, গরুরা নর্থ রেঞ্জসহ অধিকাংশ জায়গায় বন সহায়ক পদে নিয়ােগ নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। অনেক জায়গাতেই বনবস্তিবাসীরা চাকরি পাননি। অথচ শহরাঞ্চলের বাসিন্দারা চাকরি পেয়েছেন।

বন দফতরের চাকরি নিয়ে এই দুর্নীতির দায় পুরােপুরি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর চাপালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজীবের নাম না করে বললেন, যে ছেলেটা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে, বন সহায়ক পদে নিয়ােগ নিয়ে ও কিছু কারসাজি করেছে। আমরা তার তদন্ত করব। এখন বড় বড় কথা বলছে। চুরি করে বিজেপির পকেটে চলে গিয়েছে। 

এরপর মমতা বলেন, সাত-আট দিনের মধ্যে নির্বাচনের দিন ঘােষণা হয়ে গেলে আমরা কিছু করতে পারব না। তবে তদন্ত চলবে। কিন্তু উত্তরবঙ্গে বন সহায়ক পদে যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের দাবি সত্যি হলে ভেবে দেখা হবে। কেউ কেউ এদিক ওদিক দৌড়চ্ছে। যে বেশি দুর্নীতি করছে, সে তাে পালাবেই। সবাইকে জানি, কে কী করেছে। বিধানসভার পরে দেখে নেব। ওদের লম্ফ-ঝম্ফ বন্ধ হয়ে যাবে। 

মুখ্যমন্ত্রীর এই হুংকারে অবশ্য বিন্দুমাত্র দমে যাননি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার গুড়াপের সভা থেকেই তিনি পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, কোন তৃণমূল নেতার কাছ থেকে বন সহায়ক পদে চাকরির জন্য সুপারিশ এসেছিল, সেসব তথ্য আমার কাছে আছে, প্রয়ােজনে সব দিয়ে দেব। রাজীব জানতে চান, ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তৃণমূলেই ছিলেন। তখন কেন তদন্ত হল না। এরপর রাজীবও ইঙ্গিতপূর্ণ হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে এবার কেউটে বেরােবে। 

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বুধবার অন্য দলত্যীদেরও নিশানা করে বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যারা লােভী এবং ভােগী, আমরা তাড়ানাের আগেই তারা বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। কেউ কেউ ভয়ে পালাচ্ছেন। বিজেপিতে গেলে কী হবে? যখন লেজে আগুন দিয়ে দেবে, তখন লােকে বলবে লেজপােড়া বিজেপি।