মমতাময়ী বাজেটে উন্নয়নের দিকনির্দেশিকা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। (Photo: IANS)

একুশের ভােটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে একদিকে দুস্থ, তপশিলি ও আদিবাসীদের জন্য নয়া প্রকল্পের ঘােষণা অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযােগ করে দিয়ে এবারের বাজেটে কল্পতরু মমতা। সেই সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য ছাড়ের প্রস্তাবও রয়েছে আগামী অর্থবর্ষের বাজেটে।

সােমবার বিধানসভায় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এই বাজেটে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প ঘােষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে চা শ্রমিক, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, কৃষক, আদিবাসীদের জন্য বেশ কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। গত লােকসভা নির্বাচনে যে যে ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমুল সরকার, এবারের বাজেটে সেই ক্ষেত্রে মানুষের মন পাওয়ার চেষ্টা করেছে রাজ্য সরকার। দিল্লি মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের পন্থা অনুসরণ করে দুস্থ মানুষদের জন্য তিন মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত নিখরচায় বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা ঘােষিত হয়েছে বাজেটে।

সােমবার বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, এবারের বাজেটে প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আগামী ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ২,৫৫,৬৭৭ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ মাত্র ৮ কোটি। সেই সঙ্গে প্রায় নয় লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযােগ রয়েছে এবারের বাজেটে।


তফশিলি জাতির জন্য ‘বন্ধু’ প্রকল্পে কোনও পেনশন না পাওয়া মানুষদের জন্য মাসিক ১হাজার টাকা করে বার্ধক্যভাতা পাবেন ২১ লক্ষেরও বেশি মানুষ। একইভাবে আদিবাসীদের জন্য ঘােষিত ‘জয় জাহার’ প্রকল্পে আদিবাসী সমাজের মানুষদেরও একই পরিমাণ টাকা দেওয়া হবে। তেমনই চা বাগানের শ্রমিকদের আবাসের জন্য ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পের কথা রয়েছে বাজেটে। উত্তরবঙ্গের চা বাগানের শ্রমিকদের মন পেতে এবারের বাজেটে তাদের আয়কর মুকুবের কথাও বলা হয়েছে। বিনামূল্যে দেওয়া সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র, ছোটো ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহ দিতে ‘বাংলাশ্রী’ প্রকল্প। যেখানে বহু মানুষে কর্মসংস্থান হবে। কমর্সাথী প্রকল্পে এক লক্ষ বেকার যুবক যুবতীকে সহজ শর্তে ঋণ ও ভর্তুকি দেওয়া হবে। আরও বেশি এমএসএমই পার্ক স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে এবারের বাজেটে।

বাজেটে শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি উল্লেখযােগ্য ঘােষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কলকাতা, শিলিগুড়ি ও দুর্গাপুরে তিনটি সিভিল সার্ভিস প্রশিক্ষণ আকাদেমি গড়ে তােলা। রাজ্য বাজেটে বিদ্যুৎ মাশুল ছাড়ের ‘হাসির আলাে’ প্রকল্পটি ছিল দিল্লির কেজরিওয়াল সরকারের মডেলে গড়া।

বিদ্যুৎ মাশুল ছাড়াও মােটর ভেহিকেলস’এর ক্ষেত্রে বকেয়া কর জমা দিলে সমস্ত জরিমানা মুকুবের শর্ত, বিক্রয়কর ও প্রবেশ করের বিবাদ নিষ্পত্তির প্রকল্পের পরিকল্পনা, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে জমে থাকা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, বকেয়া স্টাম্প ডিউটির সুদ মুকুব, জমি একত্রীকরণে স্ট্যাম্প ডিউটি হ্রাসের প্রস্তাবনা নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারের মমতা’র স্পর্শ রয়েছে, বলাই যায়।