বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস দিলে সব প্রার্থী তুলে নেব : অভিষেক

Written by SNS March 31, 2024 12:32 pm

মথুরাপুর থেকে বিজেপিকে নয়া চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিনিধি— চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ! তবুও সাড়া নেই গেরুয়া শিবিরের৷ শনিবার কুলপির নির্বাচনী কর্মীসভা থেকে ফের বিজেপি-কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ লক্ষীর ভান্ডার নিয়ে আগেই কেন্দ্র কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তিনি৷ এবার কেন্দ্রবিন্দুতে আনলেন রান্নার গ্যাস৷ একক ভাবে এবং জোটে যে ১৭টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি তার মধ্যে একটি রাজ্যেও বিজেপি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করতে পারলে রাজনীতি ছেডে় দেবেন বলে জানিয়েছিলেন অভিষেক৷ এবার তাঁর দাবি, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বাদ! শুধু রান্নার গ্যাস বিনামূল্যে দিয়ে দেখাক বিজেপি৷ তাহলে তিনি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২ কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী তুলে নেবেন৷

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর কেন্দ্রে ভোট প্রচারে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি বলছে ক্ষমতায় এলে ওরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে তিন হাজার টাকা করে দেবে৷ আমি ওদের অনুরোধ কবর, আপনাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দিতে হবে না৷ আপনারা পারলে ১০০০ টাকার গ্যাস বিনামূল্যে করে দিন৷ একটি বিজ্ঞপ্তি দিক৷ আগামী পাঁচ বছর এক হাজার টাকার গ্যাস সিলিন্ডার বিনামূল্যে দেওয়া হবে৷ আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, তৃণমূল কংগ্রেস সব আসন থেকে প্রার্থী তুলে নেবে৷ ”

প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেন, ইডি তল্লাশি চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করেছে তিন হাজার কোটি টাকা, যা পাবেন সাধারণ মানুষ৷ এই প্রসঙ্গ টেনে নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি কটাক্ষ করেন যুবরাজ, তার সঙ্গে দেখিয়ে দেন অংকের হিসেব৷ যুবরাজ বলেন, ভারতের একশো চল্লিশ কোটি মানুষকে তিন হাজার কোটি টাকা দিলে মাথাপিছু পাবেন একুশ টাকা৷ বিজেপি একুশ টাকা দিয়ে পাঁচ বছরের ভোট চাইছে৷ এই প্রসঙ্গেই বিজেপিকে ফের বাংলা বিরোধী, স্বৈরাচারী, অত্যাচারী, জমিদার বলে কটাক্ষ অভিষেকের৷

“ডায়মন্ড হারবার পারলে মথুরাপুর পারবে না?” বসিরহাটের পর এবার মথুরাপুর সভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ৩ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন তৃণমূল সেনাপতি৷ তাঁর ভাষায়, গত লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক কেন্দ্রে প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল৷ এবার পঞ্চাশ হাজার ভোট হলেও তা বাড়িয়ে ব্যবধান তিন লক্ষ করতে হবে৷ এ প্রসঙ্গেই তিনি সাধারণ মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “ডায়মন্ড হারবার যেমন আমার নিজের লোকসভা কেন্দ্র, তেমনি মথুরাপুরের সার্বিক উন্নয়নের দায় দায়িত্ব আমি আমার কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছি৷ যে বুথে, যে গ্রামে, যে অঞ্চলে ঢুকতে বলবেন আমি যাবো, আপনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বো৷ কেবল ব্যবধান বাড়াতে হবে৷ ” পাশাপাশি তিনি ২০০১ এর বিধানসভা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে মথুরাপুর তথা গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনার মানুষদের মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সাথে তাদের আত্মিক সম্পর্কের কথা৷

অভিষেক ভুলে যাননি তাঁর বিজেপিকে দেওয়া ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ এর কথা স্মরণ করাতে৷ আবাসের জন্য যে সাধারণ মানুষকে আর কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না তাও পুনরায় স্পষ্ট করেছেন তিনি৷ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই আবাসের আবেদনকারীরা টাকা পাবেন, একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা রাজ্যের কোষাগার থেকে শোধ করা হয়েছে বাংলার মানুষকে, লক্ষ্মীর ভান্ডারে অর্থের পরিমান আগামী মাস অর্থাৎ ১লা এপ্রিল থেকে বেড়ে যাবে এসবই মথুরাপুরের মঞ্চ থেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সেনাপতি৷ পাশাপাশি তিনি বলেছেন জল, বিদু্যৎ, রাস্তা থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা সবকিছুর উন্নয়ন হলে বাংলার মানুষকে আবাসও দিতে পারবে তৃণমূল৷

বর্তমানে রাজ্য বিজেপির শিকড় যে নড়বড়ে তারও প্রমান দিয়েছেন অভিষেক৷ মথুরাপুরের সভায় একাধিক বিজেপি নেতৃত্ব পদ্মশিবির ছেড়ে গর্বের সাথে তৃণমূল পতাকা উড়িয়েছেন৷ দিলীপ জতুয়া, শান্তনু বাপুলি, মিন্টু মইরা, রাহুল গায়েন, রাজারাম মন্ডল, অনিন্দ্র হালদার, অঞ্জনা সর্দার, রাজু হালদার প্রমুখ তৃণমূলের দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে জনসেবায় নিযুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন৷ কেন্দ্র সরকারের প্রতিশ্রুতি গুলি তুলে ধরে একের পর এক বিজেপির দিকে কটাক্ষের তীর ছুড়তে থাকেন অভিষেক৷

প্রধানমন্ত্রীর ‘আচ্ছে দিন’ যে আসে নি তার প্রমান বর্তমানে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, কথা মতো মানুষের চাকরি হয়নি, ৪০০ টাকার রান্নার গ্যাস হয়েছে ১১০০ টাকা, কালো টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বরং নোটবন্দির সময় মানুষকে হতে হয়েছে হয়রানির শিকার, আধার – প্যানের লিংকের নাম সাধারণ মানুষের থেকে ১০০০ টাকা নিয়েছে মোদী সরকার, আমফান থেকে কোভিড কোনো বিপদেই বাংলায় পাওয়া যায়নি বিজেপি নেতৃত্বদের উল্টে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের নেতৃত্ব তথা কর্মী সমর্থকেরাই৷ বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, ডায়মন্ড হারবার ও আসানসোল এই ৪টি লোকসভা কেন্দ্রে এখনও প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি, সেই নিয়েও কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন অভিষেক৷

ফের প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের দিকে, ‘দিদি গ্যারান্টি’ নাকি ‘মোদী গ্যারান্টি’? মথুরাপুরের ঢোলা থানা সংলগ্ন মাঠের ব্যাপক জনজোয়ার, লক্ষাধিক মানুষের কণ্ঠস্বর অভিষেকের এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে৷ মার্চের তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসেছেন কেবল তৃণমূল সেনাপতির ডাকে সাড়া দিয়ে৷ অভিষেক দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, “বাংলা বিরোধীদের উৎখাত করে, গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে উত্তরপ্রদেশে যাতে পাঠিয়ে দিতে পারি তা সুনিশ্চিত করতে হবে৷” মথুরাপুর সভার লক্ষাধিক মানুষের উচ্ছাস, আনন্দ প্রমাণ করেছে “জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন৷ তৃণমূলই করবে অধিকার অর্জন৷”