• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ইরান থেকে অবশেষে কলকাতার বাড়িতে এসে পৌঁছলাম

ভারতীয় দূতাবাস ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আধিকারিকের সাহায্যে

নিজস্ব গ্রাফিক্স চিত্র

কলকাতা, ২৪ জুন– গত ২১ জুন মধ্যরাতে আস্তারা সীমান্ত থেকে মাশহাদ শহরে পৌঁছেছিলাম। পথে পুলিশের চেকিংয়ের কারণে প্রায় দু’ঘন্টা দেরিতে গিয়ে পৌঁছেছিলাম। সব মিলিয়ে সেটা ছিল প্রায় ২০ ঘন্টার জার্নি। মাশহাদে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল এহসান হোটেলে। সেখানে আরও সব ভারতীয়দের রাখা হয়েছিল। সেখানে আমার রুমমেট হিসেবে পেলাম গুজরাতের যুবক আলি আকবরকে। ছেলেটি খুব ভালো। পরের দিন সকালে আকবরই আমাকে নিয়ে গেল দরস নামে একটি হোটেলে। সেখানে ভারতীয় দূতাবাসের অফিসারদের কাছে আমার পাসপোর্ট ও অন্যান্য সমস্ত তথ্য দিতে হল। আকবর আগেই এসব জমা দিয়েছে বলে এই ব্যবস্থার কথা সে জানতো।

এহসান হোটেলে ফিরে সেই রাতে অনেকদিন পর একটু নিশ্চিন্তে ঘুমোলাম। অন্যান্য ভারতীয়দের কাছে শুনছিলাম, কেউ কেউ ছ-সাত দিন আগে সব কাগজপত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু এখনও তাদের বিমানে ওঠার ডাক আসেনি। অথচ কী আশ্চর্য, পরের দিনই অর্থাৎ ২৩ তারিখ বেলা ১২টা নাগাদ আমারই ফোনে ভারতীয় দূতাবাস থেকে একটি কল এলো। আমাকে জানানো হল, ওইদিনই বেলা চারটের মধ্যে দরস হোটেলে আমাকে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে ওঁরা আমাকে নিয়ে যাবেন মাশহাদ বিমান বন্দরে দিল্লি ফেরার ফ্লাইট ধরার জন্য। উত্তেজনায় এবং যাতে দেরি না হয়ে যায়, সেজন্য আমি লাঞ্চ না করেই সোজা পৌঁছে গেলাম দরস হোটেলে। সেখান থেকে ঘন্টা খানেক পরে পাঁচটা বাসে করে  ২৫০জন ভারতীয়কে পৌঁছে দেওয়া হল মাশহাদ এয়ারপোর্টে। সেখানে ভারতীয় দূতাবাসের অফিসাররা আমাদের খাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেখান থেকে রাত সওয়া এগারোটায় ইরানের মাহান এয়ারলাইন্সের বিমানটি আকাশে উড়ল। ইরান থেকে পাকিস্তানের আকাশপথ হয়ে দিল্লিতে পৌঁছল আমাদের বিমানটি। ভারতীয় কোনও এয়ারলাইন্সকে পাকিস্তান তাদের আকাশসীমায় ঢুকতে দিচ্ছে না। কিন্তু ইরানের এয়ারলাইন্সের জন্যে এরকম কোনও বাধা নেই।

Advertisement

আজ ভোর চারটের সময় দিল্লি এয়ারপোর্টে এসে নামলাম। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে একজন অফিসার মি. রাও আমাকে নিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন গ্রিন চ্যানেল পেরিয়ে ফ্লাইটে বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে গেলেন। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে ইরানে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সেইজন্যেই মি. রাও দিল্লি এয়ারপোর্টে আমাকে রিসিভ করেছিলেন। তাঁর সহায়তা ছাড়া এতো অল্প সময়ের মধ্যে কলকাতার বিমান ধরা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হতো না।

Advertisement

আজ সকাল পৌনে ছ’টায় দিল্লি থেকে কলকাতাগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ছাড়ল। কলকাতা এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছলাম আটটায়। সেখান থেকে সোজা চলে এসেছি দক্ষিণ কলকাতার যাবদপুরে আমার বাড়িতে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর কলেজে গিয়ে জয়েন করেও এসেছি। তবে অনুভব করছি, কোমর থেকে শরীরের নিচের অংশটা যেন ভালোভাবে নাড়াতে পারছি না। কিছুটা স্টিফ হয়ে আছে।

আসলে ইরানের সর্বোচ্চ দামাভান্দ পর্বতে উঠে ভয়ঙ্কর তুষারঝড়ের কবলে পড়েছিলাম। তাই পর্বত শীর্ষের ৪০০ মিটার বাকি থাকতেই অভিযান বাতিল করে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তুষারঝড়ের সঙ্গে লড়াই করতে করতে নেমে আসার পর হাইপোথারমিয়ার চিকিৎসা করতে হয়েছিল বেস ক্যাম্পেই। তারপরেই তো শুরু হল ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধ। ফলে আমাকে তেহরান ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল। এদিকে আমেরিকা জড়িয়ে পড়ায় যুদ্ধ আরও তীব্রতর হয়েছিল। ওই অবস্থায় নানান সঙ্কটের মধ্যে কাটিয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরতে পারলাম। এ ব্যাপারে শুরু থেকে আমাকে সহায়তা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শান্তা দত্ত দে এবং পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাস। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতীয় দূতাবাসের কাছ থেকে কিছুটা দায়সারা ব্যবহার পেলেও পরে তাঁরা খুবই সাহায্য করেছেন। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের  ভূমিকার কথাও এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়। দৈনিক স্টেটসম্যানের পক্ষ থেকে নিয়মিত আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে এবং আমার খবর তাঁরা প্রকাশ করেছেন। এজন্য আমি তাঁদের কাছে ঋণী। সবার সহযোগিতা ও শুভকামনা না থাকলে আমি এতো তাড়াতাড়ি হয়তো ফিরতে পারতাম না।

Advertisement