পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি মেনে শনিবার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় প্রস্তাবিত ‘বাবরি’ মসজিদের শিলান্যাস করলেন সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এই কর্মসূচির জেরে এদিন সকাল থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক। বেলডাঙার বড়ুয়া মোড় থেকে রেজিনগর পর্যন্ত জাতীয় সড়কে যান চলাচলের গতি থমকে যায়। বেলা গড়াতেই রাস্তার কলকাতামুখী লেনে পর পর দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়িগুলি। তবে শিলিগুড়িমুখী লেনে যানজট তুলনামূলক কম ছিল। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। মসজিদ শিলান্যাস কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এদিন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স, বিএসএফ সহ ৩,০০০-রও বেশি নিরাপত্তা কর্মী।
জানা গিয়েছে, মসজিদের শিলান্যাস কর্মসূচি যেখানে হয়েছে, সেই জায়গাটি জাতীয় সড়ক থেকে খুব বেশি হলে ৩০০–৪০০ মিটার দূরে অবস্থিত। অনেক মানুষ সড়কপথে এই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে আসেন। অনেক গাড়ি জাতীয় সড়কের ধার বরাবর দাঁড়িয়ে পড়লে যানজট শুরু হয়। যানজটের কারণে বহু মানুষ প্রায় ৭–৮ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সভাস্থলে পৌঁছোন। অনেকে আবার জাতীয় সড়কের পার্শ্ববর্তী কৃষিজমিগুলি ব্যবহার করে সভাস্থলে পৌঁছান। মসজিদ নির্মাণের জন্য মাথায় ইট নিয়ে আসতেও অনেককে দেখা যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বহু গাড়িকে পলাশি থেকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও যানজট পুরোপুরি সামাল দিতে পারেনি পুলিশ।
এদিন অনুষ্ঠানস্থল থেকে মমতাকে নিশানা করে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যা করবেন, সেটাই ঠিক। বাকিরা যা বলবে সেটা ভুল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এত অহঙ্কার। মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী করে কী পেয়েছে সংখ্যালঘুরা? বাংলায় ৩৭ শতাংশ সংখ্যালঘু আছে। তাঁদের সিংহভাগের ভোট পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা।’ মমতাকে প্রাক্তন করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ধাপে ধাপে সংখ্যালঘু বিধায়কের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে তৃণমূল। ২০১১ সালে সেই সংখ্যাটা ছিল ৬৭ জন। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫৭-তে। ২০২১ সালে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪-জনে। হুমায়ুন আরও জানান, মসজিদ নির্মাণে টাকার অভাব হবে না। ২৫ বিঘা জমিতে মসজিদ চত্ত্বরে নির্মাণ হবে কলেজ, হাসপাতাল। তিনকাঠা জমির উপর মূল মসজিদ নির্মাণ হবে।
অন্যদিকে, বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের শিলান্যাসকে কেন্দ্র করে অশান্তির আশঙ্কায় ও জনসাধারণের সাহায্যের জন্য ৬ ডিসেম্বর রাজভবনে অ্যাক্সেস পয়েন্ট সেল চালু করা হয়েছে৷ রাজভবনের তিন পদাধিকারীকে সেই সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ এমনকি রাজ্যপাল স্বয়ং এই সেলের পর্যবেক্ষণে থাকবেন বলে রাজভবন সূত্রে খবর৷ যেকোনও সময়ে ফোন বা ই-মেইলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এই সেলে যোগাযোগ করতে পারবেন৷ যেকোনও ধরনের অশান্তি, হুমকি, ভয় দেখানো বা কারও দ্বারা প্রচারিত উস্কানিমূলক বক্তব্য সম্পর্কে জানাতে পারবেন৷ রাজ্যপাল এই পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করবেন৷