শিলিগুড়ি, মালদহ ও কোচবিহার জেলায় বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হয়ে গেল হোটেলের দরজা৷ তবে চিকিৎসার জন্য এদেশে আসা মানুষজনের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকরী হবে কি না তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি হোটেল মালিকরা৷ বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর নজর রেখে তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গিয়েছে।
হোটেল মালিকদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে জেলার বণিক সমাজের একাংশ৷ ভারত সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করায় ও বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই মর্মে হোটেলে হোটেলে বিজ্ঞপ্তি সেঁটে দিয়েছেন হোটেল মালিকরা।
কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশে জ্বলছে অরাজকতার আগুন৷ প্রতিবেশী দেশের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির কারণে ভারত-বাংলা সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সীমান্ত ঘেঁষা এলাকার ভারতীয়রা৷ মালদহ জেলার সীমান্ত এলাকাতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
এই কয়েকদিনে বাংলাদেশিদের আসার সংখ্যা অনেকটাই কমেছে৷ বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও। ভারতের তরফে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যে সব বাংলাদেশি নাগরিক আগে ভিসা পেয়েছেন বা জরুরি ভিত্তিতে বর্তমানে ভিসা পেয়েছেন তাঁরাই ভারতে আসতে পারছেন।
মালদহ জেলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন স্বীকৃত হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ৯৪৷ এছাড়াও বেশ কিছু হোটেল ও ধাবা রয়েছে৷ সব মিলিয়ে রাত্রিবাসের জন্য দেড়শোর বেশি জায়গা রয়েছে৷ শহরের সমস্ত হোটেল মালিক একমত হয়ে তাঁদের সংগঠনের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হোটেল মালিক সংগঠনের দাবি, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর অত্যাচার চলছে। তাঁদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। তার প্রতিবাদেই বাংলাদেশের কোনও নাগরিককে হোটেলের রুম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মালদহ জেলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে মালদহর কোনও হোটেলে কোনও বাংলাদেশি নেই৷ চিকিৎসা করার জন্য ভারতে আসা বাংলাদেশিদের হোটেলের রুম দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এক হোটেলের মালিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের হত্যার বিচার চান তিনি। হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও প্রতিবেশী দেশের ভারত বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেলের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন মালদহর হোটেল মালিকরা৷ এবারও তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।
অন্যদিকে শিলিগুড়িতে সংগঠনের আওতায় ১৮০টি হোটেল রয়েছে। সমস্ত হোটেলেই এই নিয়ম জারি করা হয়েছে। ‘কোচবিহার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ জানিয়েছে, ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে হোটেল মালিক সমিতি বাংলাদেশিদের জন্য পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিলিগুড়ির হোটেলগুলির দেওয়ালে নোটিস সাঁটানো হচ্ছে, ‘বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষেধ।’