বাংলায় দ্রুত একশো দিনের কাজ শুরুর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। একশো দিনের কাজে বকেয়া অর্থ এবং রাজ্যের পাওনা-গণ্ডা নিয়ে কেন্দ্রকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত। এক মাস পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। শুক্রবার হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলায় প্রায় গত তিন বছর ধরে ‘মহাত্মা গান্ধীর রুরাল এমপ্লয়মেন্ট প্রকল্প’ বা ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। রাজ্য বার বার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছে। হাইকোর্ট হয়ে জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। গত ২৭ অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্টের ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত রায় বহাল রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এবার মনরেগা প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজ বাংলায় দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। কাজ শুরু করতে কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের আইনজীবী।
Advertisement
১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সরব রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। কেন্দ্র এই খাতে রাজ্যের পাওনা টাকা আটকে রেখেছে বলেও বার বার অভিযোগ তোলা হয়। দীর্ঘ দিন ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকায় মানুষের রোজগার নেই। ১০০ দিনের টাকা নয়ছয় করেছে তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির। প্রকৃত উপভোক্তাদের বঞ্চিত করে ওই টাকা অন্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। সেই কারণেই টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের।
Advertisement
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বন্ধ হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজে মজুরি দেওয়া। এই অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি। মামলাকারীদের তরফে আদালতে আবেদন করা হয়, বকেয়া মজুরির টাকা অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়া হোক। তা ছাড়া এত দিন টাকা বন্ধ রাখার জন্য ০.০৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
রাজ্যে বন্ধ থাকা ১০০ দিনের প্রকল্প চালু করতে জুন মাসে কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টে। কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্প অনন্তকালের জন্য ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এই রায়ের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যায় কেন্দ্রীয় সরকার। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। শুনানি শেষে ১০০ দিনের টাকা দেওয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে বহাল রাখে ডিভিশন বেঞ্চ। সেই সংক্রান্ত মামালার শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টে। সেই শুনানিতে কেন্দ্রকে কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাংলা পরিদর্শনে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ এবং দার্জিলিং, এই চার জেলায় ৫০ কোটির বেশি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ নিয়ে আদালত কোনও মন্তব্য করতে চাইনি। প্রয়োজনে এই চার জেলাকে বাদ দিয়ে রাজ্যের বাকি অংশে ১০০ দিনের কাজ চালু করার কথা বলে আদালত। জনস্বার্থের জড়িত এই প্রকল্পের কাজ চালু হওয়া দরকার বলে জানিয়েছিল হাইকোর্ট।
গত তিন বছর ধরে এই প্রকল্প বন্ধ থাকায় কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্য প্রায় ৪ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা পায় বলে দাবি। সেই অর্থ কেন্দ্রকে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন করে হাইকোর্টের আবেদন করে রাজ্য। শুক্রবার ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত মামলাটি ওঠে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চে। সেই মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, যত দ্রুত সম্ভব বাংলায় মনরেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে। বকেয়া অর্থের বিষয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানাতে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ আদালতের। এক মাস পরে এই মামলার পরবর্তী সম্ভাব্য শুনানি।
শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি বঞ্চিত করার অভিযোগে একাধিকবার প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লিতে গিয়ে প্রতিবাদও করেন তৃণমূলের সাংসদ ও বিধায়করা। প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে ও হাইকোর্টের নির্দেশে একশো দিনের বকেয়ার সমস্যা মিটতে চলেছে।
Advertisement



