বন্ধ হয়ে গেল মেদিনীপুরের হরি সিনেমা হল

মেদিনীপুর শহরে তিনটি সিনেমা হল ছিল। যার মধ্যে অরোরা ও মহুয়া সিনেমা হলটি ২০০৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। মেদিনীপুর শহরের বল্লভপুরে চলছিল হরি সিনেমা হল টি ।তাও শুক্রবার বন্ধ হয়ে গেল। ১৯৪৭ সালে মেদিনীপুর শহরের বল্লভপুরে হরিচরণ সাউ সিনেমা হলটি তৈরি করেছিলেন। তাই শুক্রবার বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান’ বলে স্লোগান তোলা হয়। প্রচার হয় সমাজমাধ্যমে। ওইটুকুই সার? হল না থাকলে সিনেমা চলবে কোথায়? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
মেদিনীপুর শহরের সিনেমা জগতের শেষ প্রদীপ নিভিল অবশেষে! বন্ধ হলো বল্লভপুরের ‘হরি’ সিনেমা হল। স্মৃতিচারণায় ডুবলেন শহরবাসী।শুক্রবার থেকে বন্ধ হচ্ছে মেদিনীপুর শহরের হরি সিনেমা হল। গত কয়েক বছর ধরে এটিই ছিল শহরের একমাত্র সিনেমা হল। কারণ, শহরের অন্য দু’টি সিনেমা হল, ‘অরোরা’ ও ‘মহুয়া’ ২০০৮ সাল নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়। সিনেমাপ্রেমী শহরবাসীর হলে বসে সিনেমা দেখার একমাত্র ভরসা ছিল এই ‘হরি সিনেমা’। হলের মালিক নাওল কিশোর থারাড বলেন, ‘গত ৪-৫ বছর ধরে প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। কোভিডের সময় থেকেই ক্ষতি মাথায় নিয়েই হল চালিয়ে এসেছি। নতুন সিনেমা নিয়ে এলেও টাকা উঠছে না। কী করে চালাব? তাই হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি।’উল্লেখ্য, বল্লভপুর এলাকায় ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ হরিচরণ সাউয়ের হাত ধরে ‘হরি সিনেমা’ হল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে এই হলটি লিজে নিয়ে চালাচ্ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা নাওল কিশোর থারাড। বর্তমানে এই হলে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ৮ জন কর্মী আছেন। হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার নোটিস পাওয়ার পরে তাঁরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
হলকর্মী সমীরকুমার দাস বলেন, ‘স্থায়ী কর্মীদের জন্য ৪ লক্ষ টাকা করে এবং অস্থায়ী কর্মীদের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি আমরা। না হলে আমরা আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।’ ক্ষতি হবে হলের আশেপাশের ব্যবসায়ীদেরও। বাণেশ্বর দাস, তারকনাথ আঢ্য, রাজেশ দাস প্রমুখরা বলেন, ‘আমরা প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হব। এই এলাকাটা একেবারে খাঁ খাঁ করবে।’
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মেদিনীপুর শহরের সুপ্রতিষ্ঠিত কবি ও সিনেমা সমালোচক সিদ্ধার্থ সাঁতরা জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের চার তারিখ ১৯৪৭ সালে কৃষ্ণলীলা ছবি দিয়ে শুরু হয় হরি সিনেমার পথ চলা। আমাদের কৈশোর আর যৌবনের অনেক স্মৃতিই জড়িয়ে আছে এই ‘হরি সিনেমা’কে ঘিরে। সেইসব দিনের কথা মনে করলে চোখে জল আসে বৈকি! শহরের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি তথা শর্ট ফিল্ম নির্মাতা ইন্দ্রনীল দে বলেন, ‘মনে পড়ে মায়ের হাত ধরে প্রথম সিনেমা দেখতে এসেছিলাম এই হরি সিনেমা হলে। সিনেমাটি ছিল ফেলুদা সিরিজের ‘গোরস্থানে সাবধান’। পরে অনেক বাংলা, হিন্দি সিনেমা দেখেছি। সকলে মিলে সিনেমা দেখার সেই জায়গাটা শুক্রবার থেকে আর থাকবে না, ভাবতেই পারছিনা!’